বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস ৫
সুকুমার সেন
গত অর্ধশতাব্দী কাল ধরে সুকুমার সেন ও ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’, প্রায় সমার্থক এবং সমোচ্চারিত। বস্তুত, এই মহাগ্রন্থের নতুন করে পরিচিতির প্রয়োজন পড়ে না। এমনই পরিচিত এবং এমনই প্রয়োজনীয় এই বই। সন্দেহ নেই, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেও সুকুমার সেনের ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। ইতিহাসকে যথাসম্ভব, কালানুক্রমিক এবং একইসঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ রূপে বর্ণনা করাই যে সার্থক ইতিহাস-রচয়িতার লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেদিকে প্রথম আমাদের দৃষ্টি ফেরালেন তিনি। আর একটি উল্লেখ্য ব্যাপার হল, কখনওই আত্মতুষ্ট থাকেননি সুকুমার সেন। এ-গ্রন্থের প্রতিটি নতুন মুদ্রণকে করে তুলেছেন প্রকৃত অর্থে এক-একটি সংস্করণ। যেমন এই আনন্দ-সংস্করণ। পরিবর্জনে-পরিবর্তনে-পরিবর্ধনে এ এক নতুন গ্রন্থ। এই পঞ্চম খণ্ডের কালসীমা ১৮৯১ থেকে ১৯৪১। বঙ্কিমযুগের সমাপ্তি থেকে আধুনিক সাহিত্যের প্রতিষ্ঠালগ্ন পর্যন্ত পঞ্চাশ বৎসরব্যাপী সময়-প্রবাহে রচিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। এই পর্বের তিনটি প্রধান ঘটনা প্রথম বিশ্বমহাযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথের তিরোভাব ও দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধ। লেখক দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমসময়ে রচিত সাহিত্যের আনুপূর্ব ও অনুপুঙ্খ আলোচনার শেষে ইতি টেনেছেন। এই খণ্ডেও—আনন্দ সংস্করণের পূর্ববর্তী খণ্ডগুলির মতোই-নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়েছে পুরনো কয়েকটি পরিচ্ছেদ, নতুনতর তথ্যের সংযোজন ঘটেছে, নতুনভাবে লেখা হয়েছে, কিছু কিছু অংশ ও পরিচ্ছেদ, বিচার বিশ্লেষণে অন্যতর দৃষ্টিভঙ্গি প্রযুক্ত হয়েছে। এখানে সবিশেষ উল্লেখ্য, জীবনাবসানের স্বল্পকাল আগে আনন্দ-সংস্করণের প্রেসকপি প্রস্তুত করার সময়, গ্রন্থকার এই খণ্ডে আলোচিত কালসীমার বিস্তার ঘটাবেন ভেবেছিলেন। ব্যক্ত করেছিলেন সেই অভিপ্রায়ও। কিন্তু কর্মব্যস্ততার জন্য পরিকল্পিত সংযোজনটি লেখার অবসর তিনি পাননি। শতাব্দীর সমান বয়সী এই শ্রদ্ধেয় লেখকের সতর্ক ও সন্ধানী মন আমৃত্যু যে কত জঙ্গম ছিল, তারই বিরল উদাহরণ হয়ে রইল ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’-এর এই আনন্দ সংস্করণ।