'যশোর রাজ্যের সন্ধানে-
যশস্বী যশোর: কোথায় খুঁজি তারে?
বিদ্রোহের নগরী বাংলা। নদী নালা খাল বিলে শতধা বিভক্ত এই ভূমির মানুষেরা কখনও অন্যের অধীন হতে শেখেনি। নিজেই তার একমাত্র হুকুমদাতা। নিজ ইচ্ছাবলেই চালিত হয়েছে সে। যখনই সুযোগ এসেছে মৌর্য, পাল, সেন, ঘোরী, লোদী, কিংবা মোঘলদের থেকে মুক্ত হয়ে নিজেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আবার এই সমস্ত রাজাদের শাসন যখন দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন অপেক্ষাকৃত ছোটো ছোটো সামন্তপ্রভুরা নিজেরাই স্বাধীন রাজত্ব পাতিয়েছে। এমন কত শত-সহস্র রাজবংশ যে বাংলার বুকে
মাথা তুলেছে আর বিলুপ্ত হয়েছে; তার কোনো লেখাজোখা নেই। এদের মধ্য কোনো রাজ্য ছিল রীতিমতো বিশাল, তাদের শান শওকত ছিল তুলনাহীন। আবার কোনো রাজ্য ছিল কয়েক বর্গ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ। বিদ্রোহী বাংলার এই স্বাধীনচেতা রাজন্যদের কেউ কেউ শৌর্য-বীর্যে-সাহসে ইতিহাসের পাতায় দাগ কেটে গিয়েছে। তার কতক সামান্য আঁচড় নয়, রীতিমতো গিরিখাত।
এমনই একজন ছিলেন মহারাজ প্রতাপাদিত্য। নদ-নদীবিধৌত বাংলার এক কোণে বসে তিনি মোঘলদের টক্কর দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন। গৌড়ের যশে যশস্বী যশোরের এই মহান নৃপতি অনেকদিন ধরেই আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। সময় পেতে তাই ভাবলাম, ইতিহাসের গর্ভগৃহে অভিযান না চালালে মন নিজেই আবার বিদ্রোহ না করে বসে।
বাংলায় তখন সালতানাত চলে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আজকের আধুনিক নামগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল তখনও ভবিষ্যতের বুকে। এই ভূমি ছিল আরও অনেক দুর্গম। ভয়ানক বাঘ, মায়াবী হরিণ, বিকট গন্ডার আর চতুর মানুষেরা এখানে সহাবস্থান করত। তবু মানুষ নয়, এই অঞ্চল যেন চিরকালই বাঘের।'
বই- বাঙালির প্রত্নদর্শন
লেখক- অমিতাভ অরণ্য