বঙ্গের ডাকাতকালী
রাধামাধব মন্ডল
"কালেরও কালিমা মেখে, তু মা শ্যামা দাঁড়াস এসে......"
বাংলার আনাচেকানাচে রয়েছে বহু কালী পুজো। তাদের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, সে সব পুজোর বেশির ভাগই ডাকাতদের হাতে প্রতিষ্ঠিত। সুপরিচিত ও পরিচিত নয় এমন মিলিয় ডাকাতকালীর সংখ্যা নেহাত কম হবে না। এখনও পর্যন্ত লেখকের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় শতাধিক ডাকাত কালীর ইতিহাস'। তাদের অনেক গুলোই উজ্জ্বল উদ্ধার করা। সেই সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন শক্তিপীঠের কাহিনীকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সব কালী মন্দিরেও কখনো কখনো গেছেন ডাকাত সর্দাররা। এই বইয়ের বেশিরভাগ প্রবন্ধ গুলি প্রকাশিত হয়েছে এইসময় পত্রিকা, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং সাপ্তাহিক 'বর্তমানসহ অন্যান্য দৈনিকে।
------------
"...... মায়ের পুজো দিয়ে রঘু বেড়িয়ে যেতো গ্রামে/ লুঠের মালের রাজত্ব নিয়ে, ফিরতো ডেরার টানে L
"হা রে রে রে,, চিৎকারে বাতাস ভিজে, এগিয়ে আসছে শব্দ। তীব্র অন্ধকার ঠেলে কয়েকটি ক্ষীণ আলোর শিখাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসছে এগিয়ে। আলোর তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে শব্দের গভীরতা। তারপর গভীর রাতে বাবুবাড়িতে, বাসনের ঝনাৎ ঝনাৎ। আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের শব্দ। গ্রাম জুড়ে শশ্মশানের নিস্তব্ধতা
সেদিনের পদাতিক "রাই বা লাঠি' বাহিনীতে চিহ্নিত দস্যুদলকে আমরা ডাকাত, ঠ্যাঙ্গারে, ঠগি বলে জানতাম। যাঁরা কোনো না কোনো জমিদারের অধিনে কাজ করত। অতীতে রাজা জমিদারদের রায়বেশে নামে সেনাবাহিনী এবং দেহরক্ষী ছিল। জমিদারদের বাংলা থেকে বিলুপ্তি ঘটলে বাহুবলী লাঠিয়াল বাহিনীর মানুষজনরা কর্মহীন হয়ে পরে। রাঢ় বাংলার বিভিন্ন জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম গুলোতে একদা ছিল ডাকাতির রমরমা।
ইংরেজ পরবর্তী যুগে ধাক্কা লাগে সে পেশায়। তখন থেকেই একপ্রকার ডাকাতির পেশাদারিত্ব থেকে বীরবংশীয় মানুষজনরা সরে আসতে থাকে। সুলভ আগ্নেয়াস্ত্রের যুগে 'রাই' বা 'লাঠি'র গুরুত্ব ফুরালে ডাকাত বাহুবলীদের পরবর্তী প্রজন্ম অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে ছুটছে অন্য পেশায়। উপদ্রুত গ্রাম হয়ে উঠেছে শান্ত নির্জন।
মা ভৈ ভয়াল আর্তনাদের, হাড়হীম করা ডাকাতদের নিয়ে এমন ক্ষেত্রানুসন্ধানধর্মী লেখা এই প্রথম। গবেষক রাধামাধব মণ্ডলের পরিশ্রমী অনুসন্ধানে সে ইতিহাসধর্মী লেখা হয়ে উঠেছে আরও তত্ত্ব ও তথ্যে প্রাণবন্ত।
বাংলার ডাকাতদের সুখ-দুঃখ, হতাশা-বেদনার এবং লড়াইএর একটি ক্ষেত্রানুসন্ধান কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। তিনি দেখেছেন ডাকাররাও শক্তির সাধক। তাঁরাও করেন কালী পুজো। বাঁধেন গান। ডাকাতির আগে কালী পুজো করেই বের হতেন ডাকাতিতে। তাঁদের সেই আরাধ্যা কালী গুলোই আজকের "বঙ্গের ডাকাত কালী'। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাধর্মী বই।
লেখক পরিচিতি ::
লেখাই তাঁর একমাত্র জীবিকা। তবে এখনও মাটির বন্ধুত্ব তাঁকে টানে। এক অন্যরকম করে শুরু করা জীবন। আখড়া, আশ্রম, শ্মশানভূমি, বাউলতলি, ফকিরি ডেরা, ডাকাতি ডেরা, বাউল আখড়ায় সাধু গুরু বৈষ্ণব, ওঝা গুনিনের পাশাপাশি তাঁর নিত্য যাতায়াত একদা অন্ধকারকে জয় করে রাখা পরিবারদের, এপ্রজন্মের মানুষ গুলোর সঙ্গে। সামাজিক নানা ঘাত প্রতিঘাতের ভঙ্গুর পথে হেঁটে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এম.এ। অখণ্ড বর্ধমানের আউশগ্রামের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৩৯৩ সনের, ২রা আশ্বিন। কবিতা প্রেমের লেখা। বাঁধেন গানের কলি। ভালোবাসেন আঁকতে, মূর্তি গড়তে এবং লোক গানের আসরে আড্ডায় মেতে থাকতে। যদিও তিনি নিয়মিত লিখছেন উপন্যাস, গল্প, আখ্যান, মৌলিক ও গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ। বিচিত্র বিষয়ের ওপর কাজ করে চলেছেন নিয়মিত। লোকায়ত গদ্য লেখায় এবাংলার তরুণ প্রজন্মের তিনি মুখ। এই সময়, আনন্দবাজার, বর্তমান, সুখীগৃহকোণ, সাপ্তাহিক বর্তমান, আজকাল, একদিন, প্রাত্যহিক খবর, সুখবরসহ বাংলা ও বাংলার বাইরের শতাধিক কাগজের তিনি নিয়মিত লেখক।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.