বাংলার টহল গান
রাধামাধব মণ্ডল
"....শচিরও আঙ্গিনা মাঝে, আমার গৌরচাঁদ নাচিয়া বেড়ায় গো......
আত্মদর্শনের 'টহল' গানে, মনের ভিতরে সে একজন খেলা পাতে। আন্তবাক্যের সেই লোকসুরে, সাধকের চৌকাঠ ভাঙ্গে নিয়মের বেড়াই। আমার আমিকে, জাগানোর গান "টহল"। মূলত বৈষ্ণবদের হাত ধরেই 'উহলে"র উৎপত্তি!..."
"তোমার পরশ লাগে হিয়া তনু মাঝে/ও হে নরহরি এসো নিত্য নিতুই কাজে/সখেরও জীবনও ঠেলে গেয়ে উঠি পাড়ে/প্রেমের ধরণী সুধা বাজে মন মারে কার্তিক মাসের ভোরে বালকরোদ তখনও ফোঁটেনি। নদী পাড়ের দূরের কোনো গ্রাম থেকে ভেসে আসছে এক ভেজা মনঃপ্রাণের সুর। মাটির সেই সুরে বাজছে প্রেমের আকুত্যি আর্তচিৎকারের কাঁপুনিতে গায়ক নিজের নিজেকে নিবেদন করছেন, অশ্রুসিক্ত গলায়া কী এক নিস্তব্ধ অনুভূতি খেলে যাচ্ছে ভিতরে বাইরে । জীবনের সকাল বেলায়, প্রতিদিন এভাবেই সাধক তৈরি করেন নিজের নিজেকে। নিজের ভিতরেই বাজে সুরের কলি। সূর্যদ্বয়ের আগে, ভোরের হাওয়াতে সে সুর চলে যায় দূরে আরও দূরে, মনের ভেতর, গহীন গাঁড়ায়া গৃহবাসী দ্বার খোলে, সাধকের জাগানিয়া গানের টানেই। প্রেম মঞ্জুরি বাজে হৃদয়ের ঘরো বৈষ্ণবীয় সাধক সাধিকারা তাঁদের আরাধা মনচোরাকে ডাকেন, সাধনের টহল সুরে সুরের গভীরে গিয়ে নিজের নিজেকে জাগিয়ে তোলার এই আন্তনাকোর সাধনা তত্ত্বই রাঢ় বাংলার আদি এই সাধন সংগীত টহল। আজ বাংলা ও বাঙালির টহল। উইলকারীর দেয় মন্দিরের আদল পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করেন। আর সেই পরিবর্তনের পথই টহলের সুরে নিজের নিয়তির গালে হয় নির্মাণ। এই টহল মনের আমিকে জাগানোর গান।
সহজিয়া বৈষ্ণব সাধক সমাজের মানুষেরা, কার্তিকের হিম শীতল ভোরে উঠে শয্যা ছেড়ে গ্রামের ধারে যারে ঘোরে মাধবের নামগান গেয়ে। বৈষ্ণব পদাবলির সেই সব আত্মনিবেদনের গানকেই বলে উহল' বা 'জাগানো'।
এই বইয়ের আলোচনাতে গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে সেই টহল গান আর গানের শিল্পীদের সাধক জীবনের নানা বাঁক বদল। বিভিন্ন বৈষ্ণব ডেরায় আজও এই আন্তকথার চর্চা চলে সুরে ও গদ্যে। সে সব আন্তবাক্যের সাধন তত্ত্ব নির্ভর সংযমের কথাই তুলে এনেছেন গবেষক রাধামাধব মণ্ডল, তাঁর এই বাংলার টহল গান' বইটিতে। দেহের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আত্মদর্শনের এই বৈষ্ণবতত্ত্ব গীত টহল ও তার শিল্পীদের জীবন যাপন আপনার মনের মরমিআনায় সুধচেতন জাগাবেই।
লেখক পরিচিতি :
লেখাই তাঁর একমাত্র জীবিকা। তবে এখনও মাটির বন্ধুত্ব তাঁকে টানে, অসীমতাকে ধরতে | নিজস্ব ছন্দে এক অন্যরকম করে শুরু করা জীবন | আখড়া আশ্রম, শ্মশানভূমি, বাউলতলি, ফকিরি ডেরা, ডাকাতি ডেরা, বাউল আখড়ায় সাধু শুরু বৈষ্ণব গুরা গুনিনের পাশাপাশি তাঁর নিত্য যাতায়াত একদা অন্ধকারকে জয় করে রাখা পরিবার গুলোর এপ্রজন্মের মানুষ গুলোর কাছে। বাঙালির ডেরা ও নিশিঠেক তাঁর প্রিয়। সামাজিক নানা ঘাত প্রতিঘাতের ভঙ্গুর পথে হেঁটে লেখক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ। অখণ্ড বর্ধমানের আউশগ্রামের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, ১৩৯৩ সনের ২ রা আশ্বিন। কবিতা প্রেমের লেখা। বাঁধেন গানের কলি। ভালোবাসেন ভুলভাল আঁকতে, মূর্তি গড়তে এবং লোক গানের আসরে আড্ডায় মেতে থাকতে, নানা গল্প নিয়ে। যদিও তিনি নিয়মিত লিখছেন উপনয়স, আখ্যান, মৌলিক ও গবেষণাধর্মী নানা অজ্ঞাত বিষয়ের প্রবন্ধ। বিচিত্র বিষয়ের উপর কাজ করাটা তাঁর পেশা এবং নেশা। এছাড়াও বিচিত্র লোকগান, লোকগাথা, লোকসংস্কৃতির ওপর কাজ করে চলেছেন নিয়মিত। লোকায়ত গদ্য লেখায় এ বাংলার তরুণ প্রজন্মের তিনিই মুখ। আনন্দবাজার বর্তমান, আজকাল, এই সময়, সুখীগৃহকোণ, সাপ্তাহিক বর্তমান, একদিন, প্রাত্যহিক খবর, সুখবর-সহ বাংলা ও বাংলার বাইরের শতাধিক কাগজে তিনি নিয়মিত লেখেন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.