দাহ

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
সমরেশ বসু
প্রকাশক:
দে'জ পাবলিশিং

দাম:
₹250.00

সংস্করণ:
পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:
প্রকাশক
দে'জ পাবলিশিং
১৩, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রীট, কলকাতা -৭০০০৭৩
(0 ক্রেতার পর্যালোচনা)

এটা ওর স্বাভাবিক অবস্থা কী না, ও নিজেও ঠিক জানে না যেন, এই রকম সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে, দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। দিনের আলো এখনও রয়েছে, জানালা দিয়ে সেই আলো পড়ন্ত বেলার মিয়নো আলো, ঘরের মধ্যে এসে পড়েছে। ঘরের মধ্যে একটা আবছায়া ভাব, ঘরের মধ্যে চার দেওয়ালের ঢাকা আছে বলে, এবং দরজাটাও বন্ধ তা-ই বাইরে এখনও যতটা উজ্জ্বল, ভিতরে ততটা না। একটা আবছা ভাব, ঘরের মধ্যে, দেওয়ালের রঙ সাদা তাই এই আবছা ভাবটা আছে, কোন ভারী রঙের হলে থাকত না, যে কারণে বোঝা যায় ঘরের কোণগুলো অনেক অস্পষ্ট, অন্ধকান অন্ধকার, খাটের নিচে-খাট না, চৌকির নিচেটা প্রায় কালে. কিছুই দেখা যায় না।

দেওয়ালে কোন ভারী রঙ থাকলে ঘরটা অনেক বেশি অন্ধক লাগত, যেহেতু, বাইরের আলোতে দিনের আভাস মাত্র আছে, কিন্তু আকাশে কোন রঙ নেই, যেমন বেলা শেষের আলো হয়, লাল বা তার চেয়ে গাঢ় কিছু, কিছুই না, কারণ সম্ভবতঃ সূর্য যেদিকে অস্ত গিয়েছে বা যাচ্ছে, সেদিকে কোন মেঘ নেই, যার ওপরে বেলা শেষের আলো কিছু খেলা দেখাতে পারত। একটা কিছু না হলে, না থাকলে, সূর্য কিসের ওপরেই বা খেলা দেখাবে। তাই, আকাশ- টাকে এখন, অনেকটা, আলগা হাতে, লেখা মুছে দেওয়া শেলেটের মত দেখাচ্ছে। তাতেই মনে হয়, একটু পরেই আকাশ কালো হয়ে উঠবে, রাত হবে। পার্থীরা অধিকাংশ কাক, শহরের মিউনিসিপালিটির কনজারভেন্সি বিভাগ কেন এদের খাওয়ায় না, কে জানে, কারণ এরাই তো যত রাস্তাঘাটের ময়লা খেয়ে খেয়ে পরিষ্কার করে, শহরের কাক-ই বেশি, এবং শালিক কিছু এবং চড়ুই, বড় দুরন্ত এই ছোট পাখীগুলো, এখন সকলেই ঘর মুখো। জানালা দিয়ে তাদের বাসায় ফেরৎ যাবার, এদিক ওদিক ওড়া মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে, আর সেই পার্থীগুলো-ওগুলো পাখী কী না, তা-ই বা কে জানে, অনেকটা উড়ন্ত চামচিকের মত দেখায়, আর মনে হয় ওরা এক ধরনের অন্ধ, আকাশচরা, সরু সরু পাখাওয়ালা, ছোট বড় মেশানো ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা জীব, যেন পাখী না, তারা এখন ছায়া পড়া আকাশ ছেড়ে যেতে রাজী না। সবাই যখন ফিরে চলেছে, তখন এদের সময় হল ওড়বার, অথচ এরা রাত চরা না, কারণ ও কোনদিন এদের রাত্রে উড়তে দেখে নি। ও দেওয়ালে হেলান দিয়ে, ঘাড়টা কাত করে, মুখটাকে পাশ ফিরিয়ে, জানালার দিকেই চেয়ে আছে, যদি বা, এসব ও সত্যি দেখছে কী না, ও নিজেও ঠিক জানে না, অথচ ওর মনে পড়ে যাচ্ছে নীলিমা যেন একবার বলেছিল না কী মা-ই বলেছিল ওগুলো চাতক। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না, এমন সুন্দর যাদের নাম-চাতক-যেন কবিতার শব্দের মত, তাদের চেহারা, এত খারাপ দেখতে হবে কেন। ওদের কোনদিন বসা অবস্থায়, মাটিতে বা জলের ধারে বা গাছে বা ছাদের আলসেয় সানসেট, এ কোনদিন বসতে দেখা যায় না. কেবল উড়ছে, উড়ছে, একটু উঁচু দিকের আকাশে, যেখানে কাক বা শালিক বা চড়ুই সচরাচর ওঠে না, সেই রকম উ'চুতে উড়ছে, ঝাঁক বেঁধে, কখনও একলা না, উড়তে উড়তে, অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়, আবার ফিরে আসে, কী যে চায়, কিছু বোঝা যায় না। যেমন কাক বা চিল বা শালিক চড়ুই, সব পার্থীরই একটা কারণ বোঝা যায়, খেতে বা খাবার সন্ধানে অথবা ঝগড়া করতে কিংবা পালাবার জন্মে ওড়ে, বসে ডাকে, সব সময়েই ব্যস্ত। এগুলো সে রকম না। এদের যেন কোন খেয়ালই নেই, আপন মনে, ঝাক বেঁধে উড়ছে, আকাশের চার পাশে কী যে খুঁজে বেড়ায়, কে জানে। জল নাকি। এত তাড়াতাড়ি, সবাই মিলে অনেকখানি জায়গা নিয়ে উড়তে থাকে, দেখলে মনে হয়, ওরা যেন কিছু খুঁজেই বেড়াচ্ছে, এবং একমাত্র এই কারণেই মনে হয়, ওরা বোধ হয় সত্যি চাতক আকাশে আকাশে জল খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওদের এত তৃষ্ণা কিসের, এত হণ্যে হয়ে ফেরা, যদি সত্যি চাতকের তৃষ্ণার কথাটা সত্যি হয়, যে কারণে, একজন জল চাইলে আর একজন না দিলে, তাকে শাপ দেয়, আর এক জন্মে সে চাতক হয়ে জন্মাবে। অর্থাৎ তখন সে বুঝবে তৃষ্ণা কী, কত কষ্টের, যন্ত্রণার, পুড়ে যাবার মত, জ্বলে যাবার মত এবং তখন সে চাতকের মত হা জল হা জল করে বেড়াবে। এই আকাশচরাগুলোর চাতক যাদের নাম আর এই যেতে যেতে যাওয়া বেলায় যারা উড়ছে, তাদের এত তাপ যন্ত্রণা কিসের, কেন জল পায় না। কোথায় এরা থাকে তাও কোনদিন জানা যায় না, দেখা যায় না। ওরা কি সেইসব মানুষ, যারা গত জন্মে, তৃষ্ণার্তকে জল দেয়নি। কে জানে, মানুষ মরলে সে সত্যি আবার জন্মায় কী না, কারণ মানুষ যদি পাখী হয়, তবে কুকুর বা বেড়ালেরাও পরে মানুষ হয়ে জন্মাতে পারে। কিন্তু এসব সত্যি কী না, ও জানে না।

এইসব কথা, অল্প ঝাপসা ভাবে ওর মনের ওপর দিয়ে যেন চলে যাচ্ছে অথচ ও ঠিক এক দৃষ্টে যে আকাশে ওদেরই দেখেছে, তা না। ওর চোখ দুটো অনেকটা অন্ধকার ঘরের আয়নার মত, তাতে বাইরের প্রায় শেষ হয়ে আসা আলোর ছায়া। সেই আলোয় যা কিছু চলছে, সবই ছায়া ফেলে ফেলে যাচ্ছে। দেওয়ালটা সাদা, তাই ওকে ওর জামাকাপড় খোলা সমস্ত শরীরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যেন ওকে কেউ গজাল দিয়ে দেওয়ালে পুঁ'তে রেখে দিয়েছে। ওই তো দেখা যাচ্ছে, ঘরের মেঝের এখানে ওখানে ওর জামা কাপড় ছড়ানো, বাইরের জামা আর ভিতরে পরবার হোসিয়ারির জামা যাকে অন্তর্বাস বলে। ওর ডান হাতটা ঝুলে আছে, বাঁ হাত দিয়ে যেন দেওয়াটাকে আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করেছিল, পারেনি, কিন্তু দেওয়ালের গায়ে বাড়িয়ে দেওয়ায় হাতটার থাবা খামচে ধরার ভঙ্গিতে রয়েছে, কোমরের কাছটা একটু ভেঙে পড়েছে যে কারণে, পা দুটোই দেওয়াল থেকে বেশ খানিকটা সরে এসেছে। ডান পা-টা অনেক বেশি সরে গিয়েছে,

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat™   |   © All rights reserved 2024.