বই - অংশুমানের গঙ্গা (উপন্যাস)
লেখক - সুকান্তি দত্ত
আদিগঙ্গা একসময় প্রবাহিত হতো কালীঘাট দিয়ে। তার গায়েই মন্দির। মাত্র কয়েকশো বছর আগে গঙ্গা বা ভাগীরথী কালীঘাট হয়ে গড়িয়া, রাজপুর, বারুইপুর, মজিলপুর, ছত্রভোগ প্রভৃতি গ্রাম-নগর পেরিয়ে সাগরে মিশত। বিপ্রদাস পিপ্পলাইয়ের মনসামঙ্গল কাব্যে চাঁদবেনের যাত্রাপথে আদিগঙ্গা ও কালীঘাটের উল্লেখ পাওয়া যায়। সপ্তদশ শতকে ড্যান্ডেন ব্রুক গঙ্গার যে মানচিত্র আঁকেন সেখানে আদিগঙ্গা প্রবাহপথ দেখা যায়, যদিও অষ্টাদশ শতকে জেমস রেনেলের মানচিত্রে এই প্রবাহকে খাল হিসেবে দেখানো হয়। হয়তো রেনেলের সময়ে আদিগঙ্গার প্রবাহ অনেক কমে গিয়েছিল।
মন্দিরে ভালোই ভিড়। ভিন রাজ্য ভিন দেশ থেকেও বহু মানুষ এসেছে। মন্দিরে ঢোকার আগে বড়ো রাস্তার দু-পাশে অসংখ্য দোকান-ফুল, জবা ফুলের বড়ো বড়ো মালা, পুজোর সামগ্রী পুজোর বাসন। মাকালীর ফোটো—কত রকমের দোকান। মন্দির বা নানা তীর্থস্থান ঘিরে কত মানুষের রুটি-রুজির জোগাড় হয়, সে ভাবে, এ নিয়ে নিয়ে কি কোন সমীক্ষা হয়েছে? কোন তথ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে?
ঘুরতে ঘুরতে মন্দিরের এক নম্বর গেটের দিকে আদিগঙ্গার সামনে আসে। গঙ্গা? একটা নালা, কালো কুচকুচে জল। কিন্তু সেই জলেও ভক্তিভরে কেউ কেউ নামছে, জল ভরছে, মাথায় দিচ্ছে, এমনকি স্নানও করছে। আদিগঙ্গা এই প্রথম দেখল তা নয়, জানাই ছিল তার হাল, তবুও শুনেছিল কোর্টের নির্দেশে, সরকারি তৎপরতায় কিছু সংস্কারের কাজ হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তেমন কিছু বড়ো পরিবর্তন তো চোখে পড়ল না, তবে জন্মে নেই আবর্জনা। সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা ছাড়া এসব কাজ সফল হওয়া খুব মুশকিল।