এসেছিলে তবু আস নাই
বিজয় শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
অরুণ সারারাত মনোরমা আর ঠাকুরের কথা ভাবতে ভাবতে, ছটফট করতে করতে ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়ল। অর্পিতাদেবীও পাশের ঘরে ছেলের জেগে থাকা টের পাচ্ছিলেন। ভাবলেন, ভাইয়ের অভাবটাই হয়তো অরুণকে কষ্ট দিচ্ছে। নিজেও ঠাকুরের কথাই ভাবছিলেন। মনে হচ্ছিল ব্রহ্মচারী ঠাকুরের দেখা পেয়ে জীবনের গতিপথ অনেকটাই পাল্টে গেল। নিজেকে অনেক সহজ, সচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল। সকাল হতে তাড়াতাড়ি চা নিয়ে ছেলের ঘরে এলেন। অরুণ ঘুম ভেঙে মায়ের মুখটা চোখের সামনে দেখে উঠে বসে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অর্পিতাদেবী বললেন,
বুঝতে পেরেছি সারারাত ছটফট করেছিস। অরুণের চোখের সামনে মনোরমার মুখটাও ভেসে উঠল। বলল,
আমি এখন কি করব মা। আমি তো কিছুই ঠিক করতে পারছি না। কিরকম মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
অর্পিতাদেবী কিছু বুঝতে না পেরে ছেলের মুখ দেখে ভয় পেলেন,
কেন, কি হয়েছে?
ঠাকুর যে বললেন সামাজিক অনুশাসন না মানাটা যুবসমাজের স্বার্থপরতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। তাহলে আমার কি করা উচিৎ মা?
– তুই কোন ব্যাপারে এসব কথাগুলো বলছিস? কোন অনুশাসনের কথা?
অরুণের গলা ধরে এল,
জানো মা, মনোরমার আর আমাদের একই গোত্র। ওরাও কাশ্যপ গোত্র। তাই বলছিলাম আমার এখন কি করা উচিৎ মা? আমি না'হয় ওকে ছাড়ার কষ্টটা মেনে নিতে পারব, কিন্তু মনোরমা? ও তো কিছুতেই মানতে পারবে না। আমাকে ছাড়তেই চাইবে না।
উক্ত অংশটি ঋতবাক সম্পাদিত, বিজয় শঙ্কর মুখোপাধ্যায় রচিত 'এসেছিলে তবু আস নাই' উপন্যাস থেকে নেওয়া।
যে ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না সেই ভালোবাসা ঘাতে প্রতিঘাতে কীভাবে বেঁচে থাকে, অমলিন থাকে, লেখকের কলমে তার সার্থক রূপায়ণ। পারিবারিক শিক্ষা ও আদর্শকে কীভাবে পরের প্রজন্ম মেনে নিল সততায়, বিশ্বাসে, প্রতীতিতে, উপন্যাসের বছর চব্বিশের উচ্চশিক্ষিত সেই যুবতী একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে এই প্রজন্মের কাছে।
এরকম একটি অভিনব, সামাজিক পারিবারিক প্রেক্ষাপটে লেখক বিজয়শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'এসেছিলে তবু আস নাই'।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি