গোণ্ড রামায়ণী
ভূমিকা সম্পাদনা ও বাংলা রূপান্তর : অন্বয় গুপ্ত
গোণ্ড রামায়ণী সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা -
• গোণ্ড রামায়ণীর সাতটা পর্বের নাম: ১) লক্ষ্মণ ও ইন্দ্রকামিনী ১, (লক্ষ্মণের শত পরীক্ষা) ২) লক্ষ্মণ ও ইন্দ্রকামিনী ২, ৩) লক্ষ্মণ ও তিরিয়াফুল ৪) লক্ষ্মণ ও মছলদাই ৫) লক্ষ্মণ ও রানি পুফাইয়া ৫) লক্ষ্মণ ও বিজুলদাই এবং ৭) সীতার বনবাস। একমাত্র শেষ কাহিনির সঙ্গেই আমাদের চেনা রামায়ণের কিছু মিল আছে। এখানে যে লব-কুশ জন্মের যে কাহিনি রয়েছে, প্রায় কাছাকাছি গল্প আছে থাইল্যান্ডের রামায়ণেও। সীতা প্রথমে একটাই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, খেলতে খেলতে সে হারিয়ে গেছে ভেবে ভয় পেয়ে মন্ত্রবলে হুবহু তেমন আরেকজনকে সৃষ্টি করেন বাল্মীকি। পরে আসল ছেলেটিকেও পাওয়া গেলে সীতা দুই শিশুকেই মহানন্দে পালন করতে থাকেন। সোমদেব ভট্টের কথাসরিৎ সাগরেও
• এই রামায়ণের আসল নায়ক রাম নন, লক্ষ্মণ। লক্ষ্মণের যখন বিপদ হয়, তখনই রামকে সক্রিয় হতে বা পরামর্শ দিতে দেখা যায়।
• গোণ্ড রামায়ণী পড়তে গিয়ে মনে হবে, রামায়ণের মূল কাহিনি যেখানে শেষ হয়েছে, ঠিক সেখান থেকেই বুঝি গোণ্ড রামায়ণী শুরু হল। দেখা যাচ্ছে রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতা অযোধ্যায় আলাদা আলাদা প্রাসাদে বাস করেন। এই অযোধ্যা আবার সেই অযোধ্যাও নয়। এই অযোধ্যাপুরী ডিন্ডোরি মণ্ডল অঞ্চলের কোনও গ্রাম বা বনের কোথাও অবস্থিত। যাই হোক, এই রামায়ণের সাতটা পর্ব পড়তে গেলেই বোঝা যাবে সে অর্থে কোনও ‘কন্টিনিউইটি’ বা এক পর্বের সঙ্গে অন্য পর্বের যোগসূত্র নেই। সাতটা কাহিনি সাতটা ছোটগল্পের মতো। আলাদা আলাদা।
• প্রথম ছ’টা পর্ব পড়লে সাধারণভাবে দেখা যাবে মোটামুটি সাধারণ বিষয় হ’ল অবিবাহিত, ব্রহ্মচারী লক্ষ্মণকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তায় রাম-সীতার ঘুম উড়ে গেছে। কখনও কোনও নারী লক্ষ্মণের বাজনা শুনে মুগ্ধ হয়, আবার কারও বর্ণনা শুনে লক্ষ্মণ নিজেই মুগ্ধ হন। ইন্দ্রকামিনী, তিরিয়াফুল, মচলদাই, রানি পুফাইয়া এবং বিজুলদাই- এই পাঁচ নারী নানা ভাবে লক্ষ্মণের জীবনে আসেন। কেউ লক্ষ্মণের প্রতি তীব্রভাবে আকর্ষিত হয়ে স্বর্গ থেকে নেমে আসেন, আবার সীতার মুখে বর্ণনা শুনে কারও সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন লক্ষ্মণ।
• এই রামায়ণ পড়তে গিয়ে একাধিকবার যেন তাল কাটে। লক্ষ্মণের বিয়ে হতে হতেও শেষপর্যন্ত কোনও পর্বেই বিয়ে আর হয়ে ওঠে না- এটাই প্রাথমিকভাবে ‘থিম’ মনে হবে। কিন্তু লক্ষ্মণ শেষমেশ বিয়ে করেই ফেলছেন, এমন গল্পও এখানে আছে। আবার, যদি ধরে নিই গোণ্ড রামায়ণী শুরু হচ্ছে রাবণবধের পর থেকে, তাহলে দেখা যাবে একটা পর্বে রাবণ দিব্যি জীবিত রয়েছেন। পড়তে পড়তে এও মনে হবে, এই রামায়ণে রাবণ না থাকলেও কিছু আসে যায় না। কিন্তু রাবণ এমনই এক ইন্টারেস্টিং চরিত্র যে, একটা পর্বে তাঁকে ঠিক কায়দা করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অগত্যা কন্টিনিউইটির কথা ভুলে গিয়ে একেকটা পর্বকেই পৃথক কাহিনি হিসেবে পড়া ভাল।
• অনেক পণ্ডিত একে ‘চেনা রামায়ণের উল্টো রামায়ণ’ বলেন। কেউ কেউ এঁকে ‘স্পেশ্যাল’ বলেন অন্য দৃষ্টিকোণ রয়েছে বলে। এই রামায়ণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল সীতার বদলে এখানে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে লক্ষ্মণকে। একাধিকবার পাতালেও প্রবেশ করেছেন তিনি।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.