আরব দেশ থেকে একটি অশ্ব আজ লালকিলার অশ্বশালায় এসেছে। মরুভূমির জলবায়ু থেকে দিল্লির জলবায়ুতে এসে সে বেঁকে বসেছে, কিছুতেই বশ মানবে না সে। অশ্বশালার তত্ত্বাবধায়ক অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলো বশ মানাবার। তেজী ঘোড়া শেষে তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিলো। আহত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক লোকটি। জাফর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখছিল। লোকটা মাটিতে পড়ে যেতেই সে দৌড়ে গিয়ে অশ্বের লাগামটা টেনে ধরল। এরপর চলল খাঁটি আরবী অশ্ব বনাম তৈমুরবংশের শাহজাদার দড়ি টানাটানি। সহজ নয় এমন অশ্বকে বশ করা। নতুন অশ্বকে বশ করতে শুধু লালকিলা বা শাহজানাবাদ নয় গোটা হিন্দুস্তানে জাফরের সমকক্ষ খুব কম লোকই আছে। তাই নতুন অশ্বকে বশ করতে তার ডাক পড়ে।
জাফর অবশেষে অশ্বের পিঠে উঠে বসতে সক্ষম হল। অশ্বশালার তত্ত্বাবধায়ক লোকটি যথেষ্ট আহত। এরপর সে নতুন অশ্বটিকে নিয় অশ্বশালার সংলগ্ন ময়দানে দুপাক দিয়ে লালকিলা থেকে দিল্লির রাস্তায় বেরিয়ে গেল । জাফর জানে নতুন কোন তেজী প্রাণীকে বশ করা বা তার ঔদ্ধত্য ভেঙে দেওয়া অত সহজ কাজ নয়। প্রাণীটিও কষ্ট পায়, সেই কষ্ট জাফরের প্রাণেও ব্যাথা দেয়। তবুও এই কঠিন কাজ তার মতো আর কেউ পারে না বলেই বারে বারে তারই ডাক পড়ে। দিল্লির রাস্তায় ঘোড়াসওয়ারি করে নতুন অশ্বটিকে নিয়ে জাফর আবার প্রবেশ করে লালকিলার অশ্বশালায়। মনে একটু কষ্ট পায়, প্রাণীটির জন্য। কিন্তু জাফর জানে অশ্বর বড়ই প্রয়োজন--বিশেষত এই মুহূর্তে। লাফিয়ে মাটিতে নেমে নতুন প্রাণীটির দিকে তাকায় জাফর। তার অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে প্রাণীটির আনুগত্য। তত্ত্বাবধায়কের হাতে অশ্বের রাশ ছেড়ে দিয়ে অবসন্ন সে লালকিলার ভেতরে চলে যায়।---
সুলেখক শুভব্রত বসুর লেখা তিনটি ঐতিহাসিক উপন্যাসিকার সংকলন "কালের কপোলতলে"।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.