কোরে কাগজ
অমৃতা প্রীতম
‘কোরে কাগজ’- এর নায়ক পঙ্কজ মায়ের মৃত্যুর পর আবিষ্কার করে সে আসলে যাকে মা বলে জানত, তিনি তার মা নন। সে আদতে দত্তক সন্তান। সেদিন থেকেই তার আসল মায়ের জন্য অন্বেষণ শুরু হয়। এই অন্বেষণে উঠে আসে এক আমির সঙ্গে অন্য আমি-র সংঘর্ষ। অনুভূত হয় শুধুমাত্র রক্ত দিয়ে সম্পর্ক হয় না। আত্মার সম্পর্কও কখনও কখনও রক্তের সম্পর্ককে ছাড়িয়ে অনেক বেশি কাছের হয়ে ওঠে। উপন্যাসের একেবারে শেষে গিয়ে পঙ্কজ উপলব্ধি করে সাদা কাগজে যেগুলো লিখতে চেয়েছিল, সেখানে প্রেম আর ঘৃণা একই সঙ্গে সহাবস্থান করছে।
----------------
মায়ের ঠোঁট যেন বলিরেখার মতোই আরও দুটি রেখা মাত্র হয়ে কুঁচকে আছে — তা থেকে একটি আওয়াজ যেন ঝরে পড়ে—"আমার পঙ্কজ আমাকে আগুন দেবে"—
জবাবে নিধি মহারাজ শ্লোকাবৃত্তি থামিয়ে বলেন, "তাই হবে।"
মনে হল, মায়ের মুখের রেখাগুলো যেন সহজ হয়ে গেল। স্বরও অনেক সহজ "গঙ্গাজল—"
জানতাম মা ঘটি ভরে গঙ্গাজল এনে রেখেছেন। আমি চামচ দিয়ে মায়ের মুখে গঙ্গাজল দিলাম।
ঠোঁট যেন কাঁপল, কয়েক ফোঁটা জলের সঙ্গে সঙ্গে সেই কাঁপন থেমে গেল। আর কোনও আওয়াজ নেই। এই ক-ফোঁটা গঙ্গাজল বোধ করি মায়ের পঞ্চম এবং শেষ ইচ্ছা ছিল- বোধ হল প্রাণের সুতো এবার গ্রন্থি খুলে দিচ্ছে—পঞ্চভূত —অগ্নি, বায়ু, জল, পৃথিবী এবং আকাশ—মায়ের এক এক ইচ্ছা যেন এক একটি উপাদানের মতো। তবে এটা জানতাম না কোন ইচ্ছা, কোন উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত—শুধু জানি পাঁচটি ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে, আর এখন পাঁচটি উপাদান,পঞ্চভূত —খুলে ছড়িয়ে যাচ্ছে।...
মা ও ছেলের এই সম্পর্কের চোরাবালিতে যে একাকীত্ব জড়িয়ে রইল তার সমাপ্তি কোথায়?
অমৃতার উপন্যাস যেন তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়,ভাবায়...
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.