নেপথ্য সংগীতের অন্তরালে
অনন্যা দাশ
প্রচ্ছদ - রঞ্জন রায়
পূর্বকথা
পার্টি থেকে ফিরেই রানি প্রভাদেবী গলা থেকে হারটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলেন। এই গরমে এত সাজগোজ গয়নাগাটি পরাটা যেন এক বিড়ম্বনা! ঘরের আবছা আলোতেও ১৫০ ক্যারাটের সবুজ পান্নাটা ঝিলিক দিয়ে উঠল! পান্নাটার চারধারে আবার ফুলের পাপড়ির ঢঙে হীরে বসানো আর পুরে সেটিংটা প্ল্যাটিনামে বসানো।
রাজা জয়দেব সিংহ তাদের পাঁচিশ বছরের বিবাহবার্ষিকীতে রানিকে ওই পান্নাটা উপহার দিয়েছিলেন। জয়দেব সিংহ মানে ওঁর স্বামী এখন ব্যাবসার কাজে জার্মানিতে গেছেন তাই রানিকে এইসব পার্টিতে এক৷ একাই যেতে হচ্ছে লোকে আশা করে ওঁদের উপস্থিতির এবং সেটা নিয়ে গর্ব করে তাই যেতেই হয়। রাজত্ব তো কবেই গেছে কিন্তু জয়দেবের ব্যবসা বুদ্ধি ভালো বলে ব্যবসাটা দাঁড়িয়েছে। আজ ওই ব্যবসার জোরেই উপাধিটা রক্ষা হচ্ছে আর এই প্রাসাদটা চলছে। জয়দের সিংহ বাড়ি থাকলে অবশ্য কখনই ওনাকে ওই দামি হারটা ওইভাবে ড্রেসিং টোবিলে ফেলে রাখতে দিতেন না। ওটা সাধারণত লকারেই থকে। ঝোঁকের মাথায় আজ সকালে গিয়ে ওটাকে লকার থেকে তুলে এনোছিলেন রানি আজকের পার্টিতে পরবেন বলে। দুতিনজন বন্ধু ফোন করে বলেছিল, “তেজেশ্বর প্রসাদের বউয়ের নাকি ২৫০০-টা হিরে বসানো কি একটা হার পরে আসার কথা, সেটা পরলে তো কেউ আর আমাদের দিকে তাকিয়েও দেখবে না?”
তা প্রভাদেবী সেটা তো হতে দিতে পারেন না। তিনি না সিসোদিয়া বংশের মেয়ে, তার উপর রানি বলে কথা কেউ ওঁর গয়নাগাটি না দেখে এক হোটেল মালিকের বউয়ের গয়না দেখবে সেটা তো ওঁর ঠিক ভাবতে ভালো লাগে না! তাই উনি স্বামীর অনুমতি ছাড়াই হারটাকে বার করে নিয়ে ছিলেন। অবশ্য সমস্যা কিছু ছিল না! ডাইভার সাকেত তো ছিল! আর এখানেও তো দুজন পাহারাদার রয়েছে। জয়দেবের ভয় অমূলক অবশ্য ছেলে ভূষণ থাকলেও কিছু করা যেত না, সেও বাবার মতনই হয়েছে। ভাগিস এখন কলেজে পড়তে নিউ ইয়র্কে গেছে। এইসব ভাবতে ভাবতে রানি প্রভাদেবী বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
বাইরে রাতের অন্ধকারে কেউ লক্ষ করল না যে মার্সিডিস গাড়িতে করে রানি পার্টি থেকে ফিরলেন সেই গাড়িটার পিছনের ট্রাঙ্কটা খুলে গেল। কালো মুখোশ আর কালো পোশাক পরা কালনাগ বেরিয়ে এল। তার হাতে একটা ছোটো থলে, তাতে ছোটখাটো দরকারি কিছু যন্ত্রপাতি। সেগুলোর সাহায্যেই সে গাড়ির পিছনের ট্রাঙ্কে ঢুকতে এবং বেরতে পেরেছে। নিঃশব্দে বাগান পেরিয়ে প্রাসাদের দরজার কাছে গিয়ে দাড়াল কালনাগ। রাজা জয়দেব সিংহের বোকামি দেখে হাসল। এইখানে একটা বিশাল শক্ত লোহার দরজা ছিল কিন্তু রাজ সাহেবের সেটা পছন্দ ছিল না তাই উনি সেটাকে সরিয়ে হাল ফ্যাশানের একটা কাঠের দরজা লাগিয়েছেন। তাতে কালনাগের সুবিধাই হয়েছে, তাকে কষ্ট কম করতে হবে। এই সব নতুন দরজার তালাগুলো একেবারে ঠুনকে৷ হয়। কিছুক্ষণের চেষ্টাতেই সেটা খুলে ফেলা গেল। খুট করে একটা শব্দ হল!
“কৌন হ্যায়?”
উফফ! আর পারা যায় না! একজন পাহারাদার চলে এসেছে! কেন যে মরতে এখানে এলি। ওকে মারার কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্ত উপায় নেই। লোকটা কিছু বোঝার আগেই কালনাগের সাইলেন্সার লাগানো বন্দুকটা থেকে ‘ব্লপ’ করে একটা শব্দ বেরল আর রক্ষীটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ওর পড়ে যাওয়ার আওয়াজে দ্বিতীয় রক্ষীটাও ছুটে এলো। তাকে কাৎ করতেও বেশি সময় লাগল না কালনাগের। সদর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল সে।
বাড়ির ভিতরটা অন্ধকার । তবে কালনাগের চোখ অন্ধকারেও সব দেখতে পায়।
কি একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল প্রভাদেরীর। কি হয়েছে, বুঝে ওঠার আগেই দুটো শক্ত হাত তাঁর হাত পা মুখ বেঁধে ফেলল। ওঁকে সাহায্য করার কেউ নেই। কাজের লোকজন সব অন্য প্রান্তে আউট হাউসে থাকে।
রক্ষী দুজন কোথায় কে জানে। মুখ দিয়ে গোঙানির মতন আওয়াজ বার করতে ধাঁ করে তীর কপালে আঘাত করল লোকটা। যন্ত্রণার বুদবুদ ফেটে পড়ল প্রভাদেবীর মাথায় যেন। সেই ব্যথার মধ্যে উনি অস্পষ্ট দেখলেন ছায়ামৃর্তি ড্রেসিং টোবিল থেকে হারটা তুলে নিচ্ছে।
কী হল এরপর?? জানতে গেলে পড়তেই হবে এই রহস্য উপন্যাস।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি