নদীয়া জেলার নাট্য-চর্চা

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
শতঞ্জীব রাহা
প্রকাশক:
সুপ্রকাশ

দাম:
₹350.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

নদীয়া জেলার নাট্য-চর্চা

শতঞ্জীব রাহা

প্রচ্ছদ : তিস্তান

"নদীয়ার নাট্যচর্চার ইতিবৃত্তের সূচনা প্রত্যক্ষত ঘটেছে চৈতন্যদেবের আমল থেকে। সেই সময়ের ইতিবৃত্তের সঙ্গে লগ্ন হয়ে আছে সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মনৈতিক আন্দোলনের আভ্যন্তরীণ ও অন্তর্লীন সত্য়। সুতরাং নদীয়ার নাট্যচর্চার প্রাক্-ইতিহাসপটে প্রবেশের আগে আমাদের পেরোতে হবে নাটকীয় লোকবৃত্তের বেশ কয়েকটি জোন।

চৈতন্যদেব মুখ্যত ধর্মান্দোলন পরিচালনা করলেও তাঁর সাধনা ও পদক্ষেপের ভিতরের দিকে বহুলাংশে যে সমাজনীতি নিহিত ছিল, তা আমরা সবাই জানি। তদানীন্তনকালের সমাজকে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্যই শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব হয়েছিল-- সকল চৈতন্যজীবনীকারই এ কথা লিখতে গিয়ে গর্ববোধ করেছেন। 'সমাজ', 'সংকট' ইত্যাদি শব্দের এখানে প্রাযৌক্তিক অর্থ আছে। মধ্যযুগের সমাজ ধর্মনিয়ন্ত্রিত বলেই তার আর্থসামাজিক সংকট বিচারের ক্ষেত্রেও ধর্মের নিরিখটি এসে পড়ে। সুতরাং চৈতন্যদেবের যাবতীয় কর্মপরিকল্পনার উৎসের সমস্ত উপাদানই ধর্মের সমীপবর্তী।

চৈতন্যের ভক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রে আছে সামূহিক প্রচার সংগঠিত করা। ভক্তির আধারে নগর-সংকীর্তন এবং সম্মিলিত নামকীর্তনের ব্যাপক প্রচলন চৈতন্যদেবের প্রচার-আন্দোলনের সাফল্য সূচিত করে। নবদ্বীপলীলায় পরিকর সংগ্রহ ও তাঁদের সাহায্যে ভক্তি আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার নিমাই পণ্ডিতের সাফল্যেরই আরেক দিক। চৈতন্যদেব কর্তৃক ভক্তি আন্দোলনের প্রচার-পরিকল্পনায় নৃত্যগীতকে অবলম্বনের প্রধান কারণ নাট্যের ক্রিয়াগত স্বভাব। প্রচারের মাধ্যম হিসেবে নাট্যের তুলনাহীন কার্যকারিতার জন্যই কৃষ্ণলীলা জাতীয় নাট্যাভিনয় ও তার প্রসারে চৈতন্যদেব যত্নবান হয়েছিলেন। চৈতন্য-পরবর্তীকালে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল চৈতন্যলীলাভিনয়ও।

মনে রাখা প্রয়োজন, মধ্যযুগের মধ্যভাগ থেকে আধুনিকযুগের প্রারম্ভকাল, এমন-কী তার পরেও এ জাতীয় নাট্যরসে লোকায়ত বাঙালিসমাজ মগ্ন ছিল। প্রাচীন ভারতীয় নাটক বা সংস্কৃত নাটকের গৌরবময় যুগের অবসান আর পাশ্চাত্য মঞ্চরীতি ও নাট্যচর্চার সূত্রপাতের মধ্যবর্তীকালে, প্রধানত নব্যভারতীয় আর্যভাষাসমূহের উন্মেষ ও প্রসারের কালপর্ব চলছিল। এই পর্বে মুখ্যত রাজসভাদির পৃষ্ঠপোষণায় সংস্কৃত নাটকের আঙ্গিকানুসরণে স্বল্পায়তন এক ধরনের নাট্যরূপের চর্চা চলতে থাকে। সংস্কৃত ভাষা ও নাট্য-আঙ্গিকের বন্ধন কাটিয়ে নাট্যচর্চা ক্রমশ দেশজরূপ ধারণ করতে থাকে। এই জাতীয় নাট্যরূপের প্রধান হয়ে ওঠে সংগীত। ইত্যাকার নাট্যরূপের প্রধান বিষয় ছিলঃ কৃষ্ণকথা, কখনও বা রামলীলা। চৈতন্যদেবের আবির্ভাব-ভূমি হিসেবে কৃষ্ণকথার প্রাধান্য নদীয়ায় বেশি। আবার রামায়ণকার কৃত্তিবাসের জন্মভূমি নদীয়ায় রামকথার অস্তিত্বও আশ্চর্যের নয়। কৃত্তিবাসী রামায়ণ তো প্রকৃতপক্ষে রামায়ণ-পাঁচালি। পাঁচালি মানেই বহু শ্রোতার সামনে গেয় তো বটেই, এককভাবে অভিনেয়ও। একদিকে কৃষ্ণকথা, অন্যদিকে রামায়ণ-কথা— নদীয়ায় এই দুই দেশজ নাট্য-ঐতিহ্যের উৎসার। অথচ এর স্মৃতি তেমনভাবে কেউ ধরে রাখেননি। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ও চূর্ণস্মৃতি ছাড়া সেযুগের নাট্যস্মৃতি আজ অনুমানের বিষয়।"

'নদীয়া জেলার নাট্যচর্চা' থেকে।

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat™   |   © All rights reserved 2024.