পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন

(0 পর্যালোচনা)


দাম:
₹260.00

সংস্করণ:
পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

পৃথিবীতে এমন কোনও ভাষার অস্তিত্ব নেই, যা মূল্যহীন। প্রত্যেক মানুষের কাছেই মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সমান। যাঁদের হৃদয়ে নিজের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা আছে, তাঁরা কখনই অপর কোনও মানুষের মাতৃভাষার বিরোধী হতে পারেন না। নিজের ভাষাকে সম্মান করা কোনও মানুষের পক্ষে অপরের মাতৃভাষাকে অসম্মান করা অসম্ভব। কিন্তু কথায় আছে, নরকের রাস্তা সৎ উদ্দেশ্য দিয়ে বাঁধানো। ভাষার প্রতি এই ভালোবাসা যতদিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে, যতদিন তা অন্যান্য ভাষাকেও যথাযথ সম্মান দেয়, ততদিন তা একটি ইতিবাচক গুণ। কিন্তু যখন তা তীব্রতায় বাড়তে বাড়তে অহমিকার জন্ম দেয়, যখন নিজের ভাষাকে কেউ সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করতে শুরু করেন - তখন নিজের ভাষার প্রতি ভালোবাসার ইতিবাচক গুণ রূপান্তরিত হয় একটি নেতিবাচক গুণে। জন্ম নেয় ভাষা আগ্রাসনের। 


ভারতীয় উপমহাদেশে এই ভাষা আগ্রাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল পাকিস্তান রাষ্ট্রে উর্দুর আধিপত্য। পাকিস্তান যখন জন্ম নেয়, সেই দেশের হাতেগোনা কিছু মানুষের মাতৃভাষা ছিল উর্দু। নিঃসন্দেহে উর্দু সাহিত্যের মান ছিল অত্যন্ত উন্নত ও একটি গৌরবময় ঐতিহ্যও তার ছিল। কিন্তু এই উন্নত মান অথবা ঐতিহ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের বাকি সকল ভাষাভাষীর উপর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়া যায় কি ? এই প্রশ্নের উত্তর পাকিস্তানের স্রষ্টারা সজোরে দিয়েছিলেন - হ্যাঁ, যায়। জিন্নাহ সুস্পষ্ট ভাবেই রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দুর যারা বিরোধী, তাঁদের 'পাকিস্তানের শত্রু' বলে চিহ্নিত করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের এই আপোষহীন মনোভাব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যার মূল উৎস। এর প্রথম প্রতিবাদ এসেছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে, যা জন্ম দিয়েছিল বাংলা ভাষা আন্দোলনের এবং সেই আন্দোলনই স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টির পূর্বেই পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি ছিনিয়ে নিয়েছিল উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। বাঙালিদের এই সাফল্য আশা সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানের বাকি ভাষাভাষী মানুষের মনেও। পঞ্চাশ আর ষাটের দশক পশ্চিম পাকিস্তানেও জন্ম দিয়েছিল একাধিক ভাষা আন্দোলনের। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর পাকিস্তানের শাসকরা আর কোনওরকম ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না। ভুট্টোর পতন ও জিয়া-উল-হক-এর উত্থানের পর পাকিস্তানী রাষ্ট্র উর্দু ভাষার আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করে বজ্রমুষ্টিতে। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু মানুষ তাঁদের নিজ নিজ মাতৃভাষাকে এত সহজে বিসর্জন দিতে রাজি ছিলেন না। জিয়া শাসনেও তাঁদের আন্দোলন জারি ছিল, যে আন্দোলন জিয়া পরবর্তী সময়ে ক্রমশ গতি পেয়েছে। আজ পাকিস্তানে এই বিভিন্ন ভাষার স্বীকৃতির অধিকারের দাবী ক্রমশ আরও জোরালো হচ্ছে। তা হয়তো এখনও বিংশ শতকের মধ্য ভাগের তীব্রতায় এখনও যায়নি, কিন্তু এটা প্রমাণিত, কোনও শাসকের বজ্রমুষ্টি, কোনও উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রভাষা মানুষকে তার ভাষার প্রতি ভালোবাসাকে ভোলাতে পারে না।  

স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলা ভাষায় খুব স্বল্পই আলোচনা হয়েছে। তাঁদের নিজের ভাষার প্রতি ভালোবাসা, তার জন্য আন্দোলনের ইতিহাসের সেই অভাব কিছুটা হলেও পূর্ণ করেছে ড. প্রবাল সেনগুপ্তর এই বইটি। পাকিস্তানের পাঁচটি প্রধান ভাষা ও অসংখ্য স্থানীয় ভাষার অধিকারের লড়াই নিয়ে লিখে প্রবন্ধের সংগ্রহ এই বই। এই প্রবন্ধগুলি 'মাতৃভাষা' পত্রিকায় বিগত কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থটি সেই প্রবন্ধগুলিকেই নিয়ে হাজির করেছে দুই মলাটের মাঝখানে। 

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.