পটলা সমগ্র (খন্ড - ১)
শক্তিপদ রাজগুরু
পটলার বনভ্রমণ
সুখে থাকতে ভূতে কিল মারে বলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। মানে সংসারে বেশ কিছু মানুষ আছে তারা সুখে-শান্তিতে থাকতে চায় না। যেভাবেই হোক কোনো একটা অশান্তিকর ব্যাপারে জড়িয়ে পড়বেই। কথাটা আমাদের বন্ধু পটলার বেলাতে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। নিজে তো অশান্তিতে জড়াবেই, আর সেই সঙ্গে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের আমাদের বাকি চারজনকেও জড়াবে।
বেশ ছবির মতো সুন্দরই সবকিছু ছিল। আমরা অর্থাৎ আমি, পটলা, হোঁৎকা, ফটিক মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। গোবরা এত করেও টেস্টে অ্যালাউ হল না। হবে কী করে! মামার বিরাট কুমড়োর ব্যবসা। এবার নাকি বিদেশেও কুমড়ো এক্সপোর্ট করছে। গোবরাও সারা বাংলা ঘুরে ঘুরে কুমড়ো কালেকশন করে জোগান দিতে ব্যস্ত ছিল। কুমড়োর জন্যই অ্যালাউ হয়নি। লাউ-কুমড়োর মধ্যে নাকি মিল নেই। তাই অ্যালাউ হয়নি গোবরা। আমরা তাকে সান্ত্বনা দিই, তুই পাকা হয়ে অ্যালাউ হবি, সামনের বছর।
পটলা এর মধ্যে প্রোগ্রামও করে ফেলেছে, এবার সে অরণ্যভ্রমণে যাবে। আর ইদানীং পটলা বন-জঙ্গল নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা শুরু করেছে। অরণ্যই হল আজকের গ্রিন হাউস ব্যাঙ্ক, উষ্ণায়ন থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে পারে এই বনজঙ্গল, গাছই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু, একদল শয়তান নিজেদের হীন উদ্দেশ্যের জন্য এই অরণাকে ধ্বংস করছে-এই সব নিয়ে রীতিমতো ভাষণ দিতে শুরু করেছে পটলা। আমরা পটলার সেসব কথা মন দিয়ে না হোক কান দিয়ে অন্তত শোনার ভান করি। কারণ পটলাই আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের ক্যাশিয়ার। ক্যাশও নেই, ক্যাশবাক্সও নেই। তবু সেই-ই ক্যাশিয়ার। এতদিনের চা-টোস্ট, সিঙ্গাড়া, আইসক্রিম, এসব খরচা ওই-ই জোগায়। বিরাট বনেদি বাড়ির একমাত্র বংশধর। ওর বাবা-কাকার দুটো কারখানা, ওর ঠাকমার নামে এই এলাকায় বিরাট বাজার। বাড়িতে নিত্যপূজা হয়। ওর ঠাকমা রোজ ডেকে পাঠিয়ে আমাদের গোপালের ভোগ খাওয়ান। লুচি, কিশমিশ দেওয়া ছোলার ডাল, ছানার কালিয়া, পায়েস। তাঁর দয়াতেই পটলার হাতে ক্যাশ আসে। তাই পটলাকেই আমরা ক্যাশিয়ার বানিয়েছি।
বেশ চলছিল আমাদের প্রসাদ সেবা, খেলাধুলো। ফটিক আমাদের ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। পড়াশোনার পাশাপাশি কোন ওস্তাদজির কাছে গানও শিখছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে। আর ক্লাবে-বাড়িতে হারমোনিয়াম নিয়ে তা-না-নানা করে। ওর ওস্তাদ ওকে শিখিয়েছে-'কাঁহা গ্যায়ে ঘনশ্যাম'। সেই তিনটে কথাই নানা সুরে, নানা তালে সে রেওয়াজ করে। আমরা বলি-তারপর কী রে? ঘনশ্যাম গেল কোথায়? ফটিক বলে-পরের লাইন রেওয়াজ করাবে ছ'মাস পর। আগে এটাই রপ্ত করি। তারপর আবার ইনিয়ে-বিনিয়ে সুর তোলে-কাঁহা গ্যায়ে-
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি