পটলা সমগ্র (খন্ড - ২)
শক্তিপদ রাজগুরু
পটলার বসন্তোৎসব
দোলের দিনটা এবছর পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব অর্থাৎ আমাদের পাঁচজনের খুবই দুর্দিন গেছে। গেছে তাও বলা যায় না, এখনও তার জের চলছে। আর এই ঘন তমসার কারণ ওই পটলা।
ওটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। অবশ্য ওই পটলচন্দ্রই আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের সেক্রেটারি-কাম-ক্যাশিয়ার-কাম-কামধেনু। অর্থাৎ যখন ইচ্ছা তাকে দোহন করা যায়। ক্লাবের যাবতীয় খরচখরচা, ফুটবল টিম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভ্রমণ ইত্যাদি দমকা খরচ ছাড়াও দৈনন্দিন খরচা যেমন গুপির দোকানের চা টোস্ট ওমলেট, ভজুয়ার ঝালমুড়ি, গোকুলের আইসক্রিমের বিল সব ওই পটলাই মিটিয়ে দেয়। অবশ্য ওদের অনেক টাকা। বিশাল বাড়ি, বাবার বিরাট কারখানা, কাকার ব্যবসা, ঠাক্সার বিরাট সম্পত্তি, কি নেই। তাই পটলাকে আমাদের দরকার। তবে পটলার ওই এক দোষ। সব ভালো ওর, কিন্তু মাথায় মাঝে মাঝে উদ্ভট সব খেয়াল চাপে। আর তা মেটাতে গিয়ে নিজে তো বিপদে পড়বেই, সেই সঙ্গে আমাদেরও বিপদে ফেলবে। এবার দোলের দিন ওর খেয়ালেই নেমে এল পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের ঘোর দুর্দিন।
কুলেপাড়া চ্যালেঞ্জ শিল্ড ওই অঞ্চলের নামকরা শিল্ড। আই. এফ. এ শিল্ডের পরই তার নাকি সাইজ। সেই দুর্লভ শিল্ড আমরা পরপর দুবছর কুলেপাড়া ইলেভন বুলেটসকে কলা দেখিয়ে জিতেছি। এবারও সেমি-ফাইনালে উঠে গেছি, ওদিক থেকে উঠেছে কুলেপাড়া ইলেভন বুলেটস। ফাইনালে আর একবার মুখোমুখি হবো আমরা দুটো টিম। আর এবারও শিল্ড জিতব আমরাই তা কুলেপাড়াও জানে। এবার শিল্ড জিতলে ওই বিরাট শিল্ড পাকাপাকিভাবে এসে যাবে আমাদের হাতে। এ যেন আকাশের চাঁদ পাওয়া। তারই প্রস্তুতি চলেছে। ন্যাপাদার কোচিং-এ রোজ মাঠে নামছি আমরা। হোঁৎকা ব্যাকে, আমি পটলা ফরোয়ার্ড লাইনে, গোবর্ধন দশাসই চেহারা নিয়ে চায়না ওয়ালের অর্থাৎ দুর্ভেদ্য চীনের প্রাচীরের মত গোল আটকে দাঁড়ায়। অন্যরা তো আছেই।
আমাদের অন্যতম কর্মকর্তা ফটিক খেলাধুলা করে না। ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সে। মাঠে তার দলবল নিয়ে সাধা গলা পঞ্চমে তুলে আমাদের উৎসাহিত করে আর আমরা গোল দিলে মাঠে নেমে কথক নৃত্য পরিবেশন করে। এবার হ্যাট্রিক করব তাই ফটিকচন্দ্র মাঠে কোরাস নৃত্যগীত পরিবেশনের প্ল্যান করছে ঢোল সহকারে। কিন্তু বরাতে যে এমনি সর্বনাশ লেখা আছে তা ভাবিনি।
দোল এসে গেছে। বিভিন্ন ক্লাব ওইদিন উৎসব করে। আমরাও এতদিন ক্লাবের মাঠে ফটিকের পরিচালনায় পাড়ার খেঁদি, কুঁচি, ছিপলি, মস্তানদের নিয়ে বসন্তোৎসব করেছি। তা সেদিন পটলা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে গুপির দোকানের গরম ফিশ্ কাটলেট্ আনিয়ে সামনে ধরে। হোঁৎকা বলে, ফিশ-কাটলেট্! দুইখান দে।
গোবরার দেহটা গিরিগোবর্ধনের মিনি সংস্করণ। কিন্তু বুদ্ধিতে ঈযৎ কম। সে বলে, কাটলেট-এর সঙ্গে রুটিও দিতে বল পটলা। পেটের কোণে পড়ে থাকবে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.