রমানাথ বিরচিত মহাভারত ( সাবিত্রী পালা)
সংগ্ৰহ ও সম্পাদনা: অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়
‘মহত্ত্বাদ্ ভারবত্ত্বাচ্ চ মহাভারতঃ উচ্যতে’— মহত্ত্ব ও ভারবত্ত্বার জন্য নাম হয়েছে মহাভারত। আদিতে মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা ছিল ৮৮০০। বর্তমানে শ্লোকসংখ্যা একলক্ষ। বর্তমান মহাভারতে আঠারোটি পর্ব আছে। তন্মধ্যে বনপর্বে আছে সাবিত্রী উপাখ্যান। বনপর্বে ৩১৪টি অধ্যায় আছে। সাবিত্রীর উপাখ্যানটি অবতারণার কারণটি হল, যুধিষ্ঠিরের শিক্ষালাভ। বুদ্ধদেব বসু বনপর্বের বনটিকে বলেছেন যেন এক বিশ্ববিদ্যালয়। যুধিষ্ঠির এই অরণ্যভূমিতে বা বনপর্বে বহু জ্ঞানী ঋষিদের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাঁদের কাছে নানা জ্ঞানলাভ করেছেন। পরিশেষে তাঁকে সেই জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বকরূপী ধর্মের কাছে এবং পাশ করতে হয়েছে। যুধিষ্ঠিরের জিজ্ঞাস্য ছিল, দ্রৌপদীর সমতুল্য আর কী কেউ আছে? মার্কণ্ডেয় মুনি তখন সাবিত্রী উপাখ্যান শোনালেন এবং বললেন— ‘দ্রৌপদীর সমতুল্য জান সাবিত্রীরে’।
মূলের অনেক সংক্ষিপ্ত অনুবাদ কাশীরাম দাসের বনপর্ব। প্রাগাধুনিককালে মহাভারতের তিনরকম পাঠ চালু ছিল বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম জেলায়—সংস্কৃত ভাষায় বাংলা হরফে মূল মহাভারত, বাংলা ভাবানুবাদ ও বঙ্গাক্ষরে ওড়িয়া ভাষায় ওড়িয়া মহাভারত। এই তিন জেলায় প্রচুর সংখ্যক উৎকল বা ওড়িয়াদের বসবাস। তাই বাংলা ও ওড়িয়া দু ভাষাতেই মহাভারতের বঙ্গানুবাদ ঘটেছিল বঙ্গদেশীয় কবিদের দ্বারা। এই অঞ্চলের বঙ্গভাযী উৎকল সম্প্রদায় মধ্যযুগে সাহিত্য চর্চা করেছেন তিনটি ভাষায়— ওড়িয়া, বাংলা ও সংস্কৃত। তিন ভাষাতেই মহাভারত চর্চা তাঁরা করেছেন। উৎকল কায়স্থদের একাংশ লিপিকর ছিলেন; যেমন মণ্ডলকুলির দত্তরা। তাঁদের অনুলিখিত পুঁথিতে কখনও কখনও তাঁদের মুখের ভাষাও ঢুকেছে। তেমনি উৎকল ব্রাহ্মণরা বেশ উঁচু মানের গায়ক ও পাঠক ছিলেন। তাঁদের কণ্ঠস্বর, স্বরক্ষেপণ ও সংস্কৃত জ্ঞান অসাধারণ ছিল। আমাদের এই পুঁথিটির গায়েন দাস দামোদর ‘মধুকণ্ঠ’ উৎকল ব্রাহ্মণ ছিলেন অনুমান হয়। তাই এতেও কিছু মানভূমি ওড়িয়া-বাংলা শব্দ ঢুকেছে। ‘মানভূমি-ওড়িয়া-বাংলা ভাষা’—বোঝা যাবে ক্ষেত্রানুসন্ধান করলে। অধুনা ইঁদপুর-ছাতনা-হিড়বাঁধ-খাতড়া-মানবাজার মহকুমা সংলগ্ন অঞ্চলে উৎকল সম্প্রদায়ের মুখের ভাষার স্বাতন্ত্র্য এখনও বজায় রয়েছে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি