সভ্যতার আলোকে পৌন্ড্রজাতির বিকাশ
দীপক কুমার পর্বত
--------------
অবতারণিকা
ভারতে গুপ্ত শাসনকালে উৎকীর্ণ লিপি বা তাম্র শাসন এবং প্রাচীন চীনা লেখকরা পুন্ড্রবর্ধনকে উত্তরবঙ্গের পুন্ড্রদের স্থান রূপে উল্লেখ করে। পুন্ড্রদের আবাসস্থলই পুন্ড্র বা পুন্ড্রবর্ধন নামে খ্যাত হয়েছিল। পৌন্ড্র ক্ষত্রিয়রা কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে অনার্য একটা সম্প্রদায়। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা ব্রাত্য ক্ষত্রিয়তে পরিণত হয়। শ্রী পঞ্চানন বর্মা বাংলার বর্ণবাদী হিন্দুদের নির্যাতনের শিকার উত্তরবঙ্গের ক্ষত্রিয়দের অবহেলিত রাজবংশী ক্ষত্রিয় থেকে আর্য জাতির পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয় হিসাবে পুনরায় উচ্চবর্ণের বাঙালীদের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি অর্জন করতে এই আন্দোলন করেন। তিনি মনে করেছিলেন রাজবংশীদের অবশ্যই সংগঠিত ও শিক্ষিত হওয়া উচিত যাহা তিনি ক্ষত্রিয় সভার মাধ্যমে অর্জন করার চেষ্টা করেছিলেন। এই সংগঠনটি প্রমাণ করে যে রাজবংশীরা রাজকীয় বংশের ক্ষত্রিয় ছিলেন এবং কোচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহের সাথে তাদের ঐতিহাসিকভাবে যোগসূত্র রয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্য এবং ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের উপর ভিত্তি করে তারা শতাব্দী ধরে পরশুরামের ভয়ে নিজেদের সত্য পরিচয় গোপনকারী ক্ষত্রিয় বলে প্রমাণ করেছিলেন। এই দাবীর সমর্থনে এই আন্দোলনটি একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষত্রিয়করণ প্রক্রিয়ার পরিচালনা করে। ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ২৭শে মাঘ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে লক্ষাধিক রাজবংশীয়গণ উপনয়ন ধারণ করেন। যার ফলে উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলিতে কয়েক হাজার রাজবংশীকে "ক্ষত্রিয় রাজবংশী" হিসাবে প্রমাণ করার জন্য তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য রীতিনীতির পুনঃ প্রবর্তন করার জন্য একটা ক্ষত্রিয় সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি বাংলার ধনবাদী হিন্দুদের দৌরাত্ম ও নির্যাতনের শিকার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষত্রিয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি উত্তরবঙ্গের পৌন্ড্র ক্ষত্রিয় হিসাবে উচ্চবর্ণের বাঙালীদের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি লাভের জন্য এই আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন।