সপ্তকান্ড
দেবস্তুতি গুহ
সে বহু বহু বহু যুগ আগের কথা। পৃথিবী তখনো নবীনা। ভারতবর্ষের উত্তরাংশে আর্যগণ স্থিত হয়েছেন, বৈদিক সভ্যতার আলোকে জ্ঞান ও কৃষ্টির সমন্বয় ঘটছে সেখানে। কিন্তু দাক্ষিণাত্য তখনো অধরা। আর্যদের কাছে দাক্ষিণাত্যের অরণ্য এক অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্যময় অস্তিত্ব। বিচ্ছিন্ন কিছু মুনিঋষির আশ্রম ভিন্ন সেখানে আর্যরীতির স্পর্শ প্রবেশ করেনি। বিপদসংকুল অরণ্য় সদাকম্পমান রাক্ষসদের প্রতাপে। তাদের উপর রয়েছে রাক্ষসরাজ রাবণের ছত্রছায়া। রাক্ষসরাজ রাবণ। ত্রিলোক যাঁর পদানত। যাঁর ত্রাসে কেঁপে ওঠে আসমুদ্রহিমাচল। হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত পরম ক্ষমতাশালী স্বর্গলোক যাঁর সম্মুখে নতিস্বীকার করেছে। যাঁর প্রবলপ্রতাপে আর্যাবর্ত ধীরেধীরে প্রবেশ করছে অস্তিত্বসংকটের এক চরমতম মুহুর্তে। এই রাক্ষসরাজ রাবণ- শৌর্যে, বীর্যে, ব্যক্তিত্বের প্রকাশে যিনি অনন্য এই জগতে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাহস আছে কার? একজন করেছিলেন সেই সাহস। নিয়তির বিধানকে আপন লক্ষ্যপূরণের পথের পাথেয় করে পাড়ি দিয়েছিলেন সেই দাক্ষিণাত্যের গহন অন্ধকারে। লক্ষ্য ছিল দাক্ষিণাত্যে আর্যসংস্কৃতির আনয়ন, আর্যাবর্তের রাজশক্তির প্রভাব বিস্তার। আর লক্ষ্য ছিল রাবণের সাথে সম্মুখসমর- প্রবল আকর্ষনীয় সেই ব্যক্তিত্বকে শত্রুরূপে পাওয়ার প্রচন্ড বাসনা। সেই লক্ষ্য অর্জনের কন্টকাকীর্ণ পথে চলে কিভাবে বিজয়ী হলেন অযোধ্যার রাজকুমার শ্রীরাম? সাধারণ এক রাজপুরুষ কিভাবে জনমানসে হয়ে উঠলেন নারায়ণের সপ্তম অবতার? এই বিজয়ের মূল্য কি সারাজীবন ধরে দিয়ে যেতে হবে তাঁকে? আর রামপত্নী সীতা? দুই রাজশক্তির মধ্যেকার এই ক্ষমতার যুদ্ধ কি প্রভাব ফেলবে তাঁর জীবনের গতিপথে? তাঁদের সুন্দর মধুর দাম্পত্যযাত্রা কেমনভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এই রাজনৈতিক জটিলতায়? এই প্রশ্নগুলির মধ্য দিয়ে এই উপন্যাস এক অন্য আঙ্গিকে সপ্তকান্ড রামায়ণকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি