'নিশ্চয়ই করব।'
'যাও ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করো।'
বিশ্রাম হয়নি। বিকেলে পরিমল ওকে নিয়ে বের হল জায়গাটা দেখতে। ইচ্ছে ছিল না গোপার। তবু গেল। ফিরতে সন্ধ্যে পেরিয়ে গেল। তখন মন্দিরে আরতি হচ্ছে। ওরা কিছুক্ষণ আরতি দেখল। ভৈরবী মা নিজে আরতি করছেন। বেশ ভিড় হয়েছে মন্দিরে।
বিকাশ তখনও ফেরেনি। রাত নটা। হঠাৎ একজন এসে খবর দিল গোপাকে ভৈরবী মা ডাকছেন। পরিমলও অবাক হল। সে সঙ্গে যেতে চাইলে গোপা নিষেধ করল। তখন আরতি শেষ। মন্দিরের দরজা বন্ধ। লোকটি পাশের দরজা দিয়ে তাঁকে ভেতরে যেতে বলল।
ভেতরে ঢুকল গোপা। মায়ের মূর্তির সামনে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন ভৈরবী
মা। গোপা তাঁর পাশে হাঁটু মুড়ে বসল। মিনিট পাঁচেক বাদে ভৈরবী মা তাকালেন। তারপর উঠে গেলেন মায়ের মূর্তির কাছে। সিঁদুর আঙুলে নিয়ে বললেন, 'এসো।'
গোপা উঠে দাঁড়াতে তিনি সেই সিঁদুর পরিয়ে দিলেন কপালে।
গোপা চোখ বন্ধ করল।
মা বললেন, 'আজ সকালে যখন তোমাকে প্রথম দেখলাম তখনই মনে হয়েছিল তুমি সাধারণ নও। তোমার মধ্যে মহাশক্তির আশীর্বাদ আছে। শোেন, তুমি পৃথিবীতে এসেছ মাথা নিচু করে সব কিছু মেনে নিতে নয়। যেখানে অন্যায় দেখবে তুমি প্রতিবাদ করবে। তোমার দাদা মা সিংহবাহিনীর মূর্তি গড়েছিলেন। আমি তোমার মধ্যে সেই দেবীর প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। নিজেকে নষ্ট কোরো না। মনে রেখো, তুমি মহাশক্তির একটি অংশ।' ভৈরবী মা ওর দুই ভ্রুর মাঝখানে তর্জনী রাখলেন।
তখন আকাশের যত নীল, বাতাসের যত মোলায়েম শান্তি, মাটির যত আদুরে গন্ধ একাকার হয়ে গেল। স্বর্গ মর্ত পাতাল তখন এক বিন্দুতে স্থির। সমস্ত রোমকূপে যেন জাগরণের প্রদীপ জ্বলছে।
গোপা চোখ খুলল।
[প্রথম পর্ব সমাপ্ত |]
সিংহবাহিনী দ্বিতীয় খন্ড