সুন্দরবন ও নদীকথা
অনিমেষ সিংহ
লেখক তাঁর সুন্দরবন-জীবনের দীর্ঘ পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন ‘সুন্দরবন ও নদীকথা’ গ্রন্থে। প্রথম পর্বে সুন্দরবনের প্রাথমিক পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে, এই বদ্বীপাঞ্চলের গড়ে ওঠা, তার নদী, দ্বীপ, অরণ্যের প্রকৃতি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আর লোককথা—লোকসাহিত্যের আলোকে সুন্দরবনের প্রাচীনত্বকে খুঁজেছেন লেখক। সুন্দরবন নামের উৎপত্তি, ক্রমান্বয়ে অরণ্যের বিস্তার ও ধ্বংস, জনবসতি, জলবায়ু, জীবিকা, সংস্কৃতি, কথ্যভাষা আর অরণ্যভূমির পূর্ণ পরিচিতি প্রথম পর্বে তুলে ধরা হয়েছে।
নদীকথা নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব। সুদীর্ঘ এই সময়কালে সুন্দরবনজীবী জেলে, মৌলে, কাঠুরিয়াদের সাহচর্যে নিরবচ্ছিন্ন থেকে জঙ্গল আর নদী-নালাকে লেখক যেমন দেখেছেন, চিনেছেন আর অসংখ্য বনকর্মীদের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় জঙ্গল জুড়ে প্রায় সব খাল, খাঁড়ি, ভারানী, দোয়ানি আর নালাতে পৌঁছতে পেরেছেন, সে সব সরেজমিন সমীক্ষার ফলাফল— মাকড়সার জালের মতো বিছিয়ে থাকা খাল, খাঁড়ির উৎসমুখের নিশানা, জোয়ার-ভাটা ভাঙনে তার প্রাকৃতিক অবস্থা, সে সব এই পর্বে বিশদে বিস্তৃত করেছেন মানচিত্রসহ।
তথাকথিত প্রচলিত সুন্দরবন অরণ্যভূমির ৫৪টি দ্বীপের বদলে লেখক খুঁজে পেয়েছেন ১১২টি। তার পরিপূর্ণ পরিচিতিসহ ২২০টি খাল, খাঁড়ি ইত্যাদি, ২৬টি নদী-গাঙ আর অরণ্যভূমির ২২টি ব্লকের (২১টি মানচিত্র) পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এই গ্রন্থের সম্পদ।
লেখক পরিচিতি :
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিং, কুমারশা গ্রামে জন্ম ১৯৫৩ সালে। শিক্ষাব্রতী মা-বাবার সান্নিধ্যে প্রথম পাঠ। অজ গাঁয়ে শৈশব কাটলেও রাজনীতি আর সাহিত্যের আঙিনায় বেড়ে ওঠা। বিদ্যালয় জীবনের প্রথমভাগটা গ্রামেই কেটেছে। প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে যাওয়ার বীজ বপন সেই সময়ই। বিদ্যালয় পাঠ শেষ হয়েছে কলকাতায় আর কলেজ জীবনের মাঝপথে সেই অশান্ত সময় থেকেই সুন্দরবনের সঙ্গে সম্পর্ক। তারপর জীবনটাই হয়ে ওঠে তাঁর সুন্দরবনময়।
জীবনের বাধ্যবাধকতায় স্টেট ব্যাংকে কর্মরত থাকলেও সুন্দরবনের সঙ্গে কলকাতার জীবনের টানাপোড়েনে নিশ্চিত উপার্জনের স্থায়ী পথ অবলীলায় উপেক্ষা করে ফিরে যান সুন্দরবনে। সেখানেই বসবাস শুরু হয়, শুরু হয় তাঁর জঙ্গুলে যাযাবর জীবন। সেই থেকে সুন্দরবনের সঙ্গে পাঁচ দশকের সম্পর্ক তাঁর। আনন্দবাজার, দেশ, আনন্দমেলা, সন্দেশ, বনদপ্তরের বনবীথি, ভ্রমণ, যারা পরিযায়ী, যারা যাযাবর পত্রিকায় নিয়মিত লিখলেও এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।