ঠাকুরবাড়ির ভৃত্যমহল ও অন্যান্য
শান্তা শ্রীমানী
তখনকার দিনে ভূত্যের সংখ্যা দিয়েই আভিজাত্যের জাঁকজমক জাহির করতেন বাবুরা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বাবুদের বাবুয়ানিও কম ছিল না। আর বাবুদের সেসব বাবুয়ানি সামাল দিত চাকরবাকর, দাসদাসীরা। দারোয়ান, হুঁকোবরদার, খানসামা, খিদমদগার, বাবুর্চি, আবদার, মশালচি অগুন্তি ভৃত্য আর দাসদাসীতে ভরে থাকত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বিচিত্র তাদের কাজকর্ম, নামধাম, পোশাক-আশাক। আর ছিল দাসদাসী-ভৃত্যদের নিজস্ব আশ্চর্য জগৎ। বাবুদের সারাদিনের কাজকর্ম শেষ হলে দুয়ার খুলে যেত ভৃত্যমহলের। শুরু হত তাদের গান-বাজনা গল্প আড্ডা ঝগড়াঝাঁটি থেকে মারামারি- সবই। এই দুই আশ্চর্য জগতের কথা উঠে এসেছে 'ঠাকুরবাড়ির ভৃত্যমহল ও অন্যান্য' গ্রন্থের পাতায় পাতায়। ঠাকুরবাড়ির উত্থান পতনের সাক্ষী ছিল ভৃত্য ও দাসদাসীরা। ভৃত্যদের সারাদিনের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে ঠাকুরবাড়িতে অন্য চোখে দেখা। এছাড়াও গ্রন্থিত হেেছ আরো ন'টি আকর্ষণীয় রচনা।
-------------------
বাড়ির উত্তরের আঙ্গিনার পশ্চিম কোণে তেঁতুল আর বাদাম গাছের ছাওয়াতে যে খোলার ঘরটি ছিল যার চাল ধনুকের মতো বেঁকে প্রায় মাটিতে ছুঁয়েছে সেখানে ছিরু মেথর থাকত তার পরিবার নিয়ে। ঘরের সামনে ছিল একটা মেটে জালা, কাজের শেষে দুপুরবেলা ঐ মেটে জালায় ভরে রাখা ঠাণ্ডা জল দিয়ে ছিরু মেথর গা ধুত আর ইংরেজিতে বৌকে গাল পাড়ত। বৌটাও বাংলায় বকে যেত তার সঙ্গে।
....সন্ধে হলেই এক দাসী জ্বালায় বাতাসে নিবু নিবু পিদিম। আরেক দাসী বিছানাপাতি গুটিয়ে ছেলে কোলে নিয়ে শোয়াতে যায় নাচঘরে। সেকালে বড়লোকের বাড়ির একটা বাঁধা দস্তুর ছিল শিশুরা জন্মের পরেই মায়ের কোল ছাড়া হয়ে একটি দুগ্ধদাত্রী দাই ও এক দাসীর কোলে মানুষ হত। রবীন্দ্রনাথের ধাই-মার নাম ছিল 'দিগ্নি'। সরলা দেবীও মঙ্গলা দাসীর হাতের বিরাশী সিক্কার চড়-থাপ্পড় খেয়েই বড় হয়েছিলেন। শিশু অবনীন্দ্রনাথকে দেখাশোনার জন্য ছিল পদ্মদাসী।
...সমসের কোচোয়ান ছিল যেমন দুর্দান্ত, তার ঘোড়াটিও তেমনি। গাড়ি-খানা থেকে ঝড়ের মতো বেরিয়ে পড়তো ঘোড়া। কোচবাক্সের ওপরে খাড়া দাঁড়িয়ে সমশের চাবুক হাঁকাত। দুই দুই সহিস থাকত পিছনে। ফেটিং-গাড়ি ছিল খুব উঁচু। তাই গাড়িবারান্দার খিলেনের কাছে এসে ঝপ করে নিজের আসনে গম্ভীর হয়ে বসে পড়তো সমশের। আতর গোলাপের খুশবু ছড়িয়ে গুণেন্দ্রনাথ এসে বসতেন গাড়িতে। তারপরই শুরু হত কোচোয়ান সমশেরের খেল।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি