A Conversion of the MAHABHARAT by SUDDHASATYA GHOSH
যে মহারাজ যুধিষ্ঠির স্বয়ং ধর্মরাজ বলে পরিচিত সেই মানুষটিই যুদ্ধজয়ের বাসনায় চিৎকার করে বলে বসলেন 'অশ্বত্থামা হত'। আস্তে করে বললেন 'ইতি গজ'। আস্তে বলা অংশ তাঁর আচার্যের কানে গেল না। অস্ত্র সংবরণ করে বসে পড়লেন দ্রোণ। সেই অবসরে নিরস্ত্র মহারথকে হত্যা করে গেলেন ধৃষ্ট্যদুম্ন। মহাকাব্যের কবি সুনিপূণ নৈর্ব্যক্তিকতায় বুনে চলেন মানব চরিত্র। গুণের প্রশংসায় যেমন পঞ্চমুখ, তেমন দোষ-ত্রুটিকেও আড়াল করে চলা তাঁদের স্বভাব নয়। মহাকাব্য এক জীবনশিক্ষা শৈলীও।
আজ যে বিপুল চেহারায় 'মহাভারত'-কে আমরা
দেখি তা চিরকালই এমন ছিল না। কালের প্রলেপ পড়েছে তার চেহারায়। অজস্র কাহিনি উপকাহিনিতে বহর বেড়েছে। প্রথম যে কালে এর ভাব ও বীজ জন্মেছিল সে কালের চেহারা আজ অনুমান করা কঠিন। কুরু-পাণ্ডব দ্বন্দ্বকেই এর মূল আখ্যানভাগ ধরা চলে। তাকে কেন্দ্র করে নানা কালের নানা কবিদলের দায় হয়েছে নীতি ও আদর্শ শিক্ষা বিস্তারের। কলেবর বেড়েছে, প্রক্ষেপ হয়েছে, নবীন কাহিনি অংশ যুক্ত হয়েছে, পরিবর্ধিত ও সংস্কৃত হয়েছে। সবই হয়েছে কালের নির্দিষ্ট প্রয়োজনে।
বাংলায় মহাভারতের অনুবাদ আছে, ভাবানুবাদ আছে, টীকা-টিপ্পনি আছে, মহাভারত নির্ভর নানা উপন্যাস ও কাব্যমালা রয়েছে, তৎসত্ত্বেও এই নবীন 'মহাভারত'-এর আয়োজন কেন? অদ্যাবধি প্রকাশিত আটটি খণ্ডের পাঠকেরা জানেন তার উত্তর। শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ রচিত এই 'মহাভারত' অলৌকিকের হাতছানি এড়িয়ে বিগত ভারতবর্ষের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক এক লোকায়ত চলচ্ছবি রচনা করে চলেছে যা অনেকাংশেই নবীন। কবি সঞ্জয়, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, কাশীরাম দাসাদির পরম্পরায় 'মহাভারত'-এর এ এক যুগোপযোগী পুনঃনির্মাণ।
এ 'মহাভারত' পূর্বতন যাবতীয় 'মহাভারত'-এর সীমানা ছাড়িয়ে কাহিনি, চরিত্র, দর্শন, বিজ্ঞান এবং ইতিহাসগত অনুপুঙ্খতায় এগিয়ে চলেছে অভাবনীয়র দিকে। বিপুলন্ত বিস্তৃত এ কাজের সমাপ্তিও ঘটবে অভূতপূর্বতায়।