বাংলার ডাকাত কালী : মিথ ও ইতিহাস
পিনাকী বিশ্বাস
কালীক্ষেত্ৰদীপিকা’ থেকে জানা যায় পঞ্চদশ শতকের প্রথম ভাগে কালীঘাটের অনতিদূরে লোকবসতি থাকলেও, সেইসব জায়গা ছিল ভয়ঙ্কর ডাকাতদের আড্ডা। জঙ্গলে পরিপূর্ণ কালীঘাটে দিত তারা নরবলি। ‘কলিকাতা সেকালের ও একালের’ গ্রন্থ হতে পাই ‘পীঠস্থান বলিয়া পরিচিত হইবার বহুকাল পরেও—কালীঘাট নির্জন শ্বাপদ-সঙ্কুল অরণ্যগর্ভে, অজ্ঞাত অবস্থায় নিমজ্জিত ছিল। জনপ্রবাদ এই—ভীমকায় ভৈরব ও বামাচারী কাপালিকগণ এই নির্জ্জন বন প্রদেশস্থ কালীর পর্ণ মন্দিরের নিকটে— জঙ্গল মধ্যে বসিয়া, বীরাচার-সম্মত উপাসনা করিত। নরবলি দিয়া ভগবতীর নৃ-কপালময় খর্পরকে রুধির স্রোতে পূর্ণ করিত'।
নরবলির ঐতিহ্য অনুসরণ করে এখানে আঙুল কেটে, বুক চিরে, বা জিভ কর্তিত করে বলির রীতি চালু ছিল। ১৯৮০ সালেও কানপুরের বজরঙ্গ শর্মা কালীঘাটে নিজের জিভ কেটে ফেলেন ক্ষুর দিয়ে তার পর মা কালীকে উৎসর্গ করে বসেন। জিভ বলি অবশ্য আগেও হয়েছে। সমাচার দর্পণে পাওয়া যায় পশ্চিম দেশীয় কোনো ভদ্রলোক এই কাজ করেছেন। ‘কালীঘাটে শ্রীশ্রী কালীঠাকুরানীর সম্মুখে আপন জিহ্বা ছুরিকা দ্বারা ছেদন পূর্ব্বক বলিদান করিল তাহাতে রক্ত নির্গত হইয়া ভূমি পর্যন্ত পতিত হইল এবং সে ব্যক্তি রক্তাক্ত কলেবর হইয়া একেবারে মূৰ্চ্ছাপন্ন হইল'। ঘটনাটি ঘটে ১২৩০ বঙ্গাব্দের ৮ চৈত্র। বাংলার ভদ্রসমাজে, গৃহস্থবাড়িতে যেসব বীভৎস পুণ্যার্জনের চেষ্টা প্রতিফলিত হত তার তুলনায় অশিক্ষিত ডাকাতদের নরবলিকে দোষ দেওয়া যায় না। রথের চাকার নীচে ঝাঁপিয়ে, গঙ্গার জলে সন্তান বিসর্জন দিয়ে পুণ্যলাভের চেষ্টা যদি সমাজে প্রচলিত থাকে তবে জঙ্গলের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ডাকাতদের মধ্যে কালীর সামনে নরবলি দেওয়ার ইচ্ছা হবে এ আর আশ্চর্য কি?
ডাকাতে-বলির অজস্র কাহিনি ছড়িয়ে আছে বাংলা জুড়ে। নরবলি দিয়েছে গৌর বেদে, অধর সর্দার, চলনবিলের পণ্ডিত ডাকাত বেণী রায়। বলি দিতে গিয়ে মানুষ ধরে আনতে জমিদারের বাহিনীর হাতে খুন হয়ে গেছে সনাতন বাগদী। শোনা যায় জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী ডাকাতকালীর মন্দিরে ১৮৯০ সালে নরবলি দেওয়ার অভিযোগে ফাঁসি হয়ে যায় কাপালিক নয়নের।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.