ভূতের গল্পের ভূত ভবিষ্যৎ

ভূতের গল্পের ভূত ভবিষ্যৎ 

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত 

প্রেতাত্মা, অশরীরী প্রভৃতির বাইরে আর যে-ধরনের ভূতের কথা সাহিত্যে পাওয়া যায়, তাদের অন্যতম হল ডাকিনী, যোগিনী, হাকিনী প্রভৃতি অপদেবতা। এদের অবশ্য সঠিক অর্থে ভূত বলা চলে না। কারণ, সাধারণ বিশ্বাসে মানুষ মরে ভূত হয়। ডাকিনী, যোগিনী প্রভৃতির সৃষ্টি মানুষ মরে হয় না। শিব অথবা শক্তির সাধনায় মহিলা সাধিকা যোগিনী বা ডাকিনীর পর্যায় নিজেকে উন্নীত করেন কিংবা কোনো তান্ত্রিক কোনো মহিলার উপর ডাকিনী বা যোগিনী হওয়ার ক্ষমতা আরোপ করে থাকেন। ডাকিনী শব্দটি থেকে উৎপত্তি হয়েছে ডাইনি নামের। ডাইনি হল, যে স্ত্রীলোক নানারকম তুকতাক বা যাদুটোনায় অন্যের ক্ষতি বা উপচার করতে পারে। শাকিনী বা শাঁখা-পরা শঙ্খিনী, রাকিনী বা রঙ্কিনী এবং হাকিনী যোগিনীর বিভিন্ন সহচরী বলে মনে করা হয়।

ভারতবর্ষে তন্ত্র সাধনার ইতিহাস বহুপ্রাচীন। বঙ্গদেশে, বিশেষত পূর্ববঙ্গে, এবং ওড়িশায় তন্ত্রসাধনা এবং ভৈরবসাধনা যে বহুল প্রচলিত তার নানাবিধ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। স্বামী-স্ত্রী, বা স্ত্রী-পুরুষে জোড়া বেঁধে সাধনা করতেন তান্ত্রিক সাধকরা। এদের বলা হত যোগী এবং যোগিনী। অনেকে মনে করেন এই সাধকদের সাধনার উদ্দেশ্য হত যোগীর নিজেকে মহাদেবের, এবং যোগিনীর নিজেকে দেবী চণ্ডী বা মহামায়ার কাছাকাছি পর্যায়ে উন্নীত করা। এরকমই এক ধরনের যোগিনীর পরিচয় ছিল ডাকিনী হিসেবে। বিস্তর ভূত-প্রেত, পিশাচ, অপদেবতা, যাদের বলা হয় ‘প্রমথ’ যেমন মহাদেবের অনুচর, তেমনই দেবী চণ্ডী বা মহামায়ার অনুচর মনে করা হয় রঙ্কিনী বা রক্তপিপাসু নারী, হাকিনী, শাকিনী প্রভৃতিকে। এছাড়া আছেন মাতৃকা নামক একদল দেবী, যারা আসলে বিভিন্ন মুখ্য দেবতার স্ত্রী-রূপ। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, দেবী চণ্ডী হিংস্ররূপে পরিচিত হয়েছেন চামুণ্ডা বা চর্চিকা নামে। শুধু পরিচিতই হননি, পূজিত হয়েছেন এবং এখনও হন বিভিন্ন মন্দিরে। পরে দেখা গিয়েছে সাহিত্যিকের কল্পনায় এই হিংস্র, রক্তপিপাসু দেবী বা দেবতা পরিণত হয়েছেন তান্ত্রিকদের সৃষ্টি করা অনিষ্টকারী প্রেত বা অপদেবতায়।

ভূতের গল্পের ভূত ভবিষ্যৎ বইটিতে চোদ্দটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে ভূত নিয়ে, ভৌতিক সাহিত্যের মনস্তত্ত্ব, ভৌতিক সাহিত্যের ইতিহাস, ভূতেদের প্রকারভেদ,  ভুতেদের নিয়ে মজাদার গল্প, এবং ঐতিহাসিক ঘটনা।  বইটিতে আরো  আছে ভূত ও ভূতসন্ধানী মানুষদের নিয়ে নানা মজাদার ঘটনা। বিভিন্ন গল্পে উঠে আসা ভূতেদের চরিত্র তার সাথে লেখকের মনস্তত্ত্ব। এই বই আদ্যোপান্ত কোনও গল্পের বই না হলেও ভূত সংক্রান্ত একটি দলিল যার প্রতিটি পাতায় আছে ভূতের গল্পের মজা ও তার ইতিহাস।