বিভূতিভূষণ ও কথাসাহিত্যে বাস্তববাদ
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
প্রচ্ছদ : সুব্রত মাজি
'মার্কসীয় সাহিত্য-সমালোচনা সম্পর্কে একটা অভিযোগ শোনা যায় : নান্দনিক দিকটি এতে কম গুরুত্ব পায়। বিশুদ্ধ রসবাদী সাহিত্য-সমালোচনা সম্বন্ধে পালটা একটা অভিযোগ আনতে পারি : ঐতিহাসিক দিকটিকে একেবারেই অবজ্ঞা করা হয়।... বিভূতিভূষণ যখন লিখতে শুরু করেছেন, "সাহিত্য" ব্যাপারটা ততদিনে ধর্ম ও রাজসভার পৃষ্ঠপোষণ কাটিয়ে জনতার আম দরবারে পৌঁছে গেছে। বিভূতিভূষণের লেখায় শুধু তাঁর নিজের শ্রেণির লোক --- দরিদ্র ব্রাহ্মণের কথাই আসেনি, গ্রামীণ সর্বহারাও এসেছে। তিন বাঁড়ুজ্জেই তাঁদের লেখকজীবনের কোনো-না-কোনো পর্বে ফিরে তাকিয়েছেন "পামর"-দের দিকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শোষণ, তার "সুব্যবস্থা"-র ফলে দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, দুই মহাযুদ্ধের কৃপায় দিশি শিল্পপতি-জমিদার-ফড়ে ব্যাপারী-জোতদার-আড়তদারদের রক্তচোষা কারবার, পুরোনো, প্রায় না-পালটানো গ্রামসমাজের ক্রমাগত ভাঙন---এ-সবই প্রতিফলিত হয়েছে ইচ্ছামতী-পথের পাঁচালী-অপরাজিত-অশনি সংকেত-এর কালসীমায়। ঐতিহ্যায়ত উচ্চবর্ণ হিন্দু "বুদ্ধিজীবী"-র পেশা---যজন যাজন অধ্যয়ন অধ্যাপনার প্রথাগত জীবনযাত্রাও আস্তে আস্তে অচল হয়ে আসছে। এশিয়াটিক সমাজের পরিবেশে বাস্তবতা প্রকাশের যে বিশিষ্ট ঘরানা---প্রতিবাদ আছে, প্রতিরোধ নেই; বিক্ষোভ আছে, বিস্ফোরণ নেই--- তার দার্পনিক প্রকাশে বিভূতিভূষণই বোধহয় সবচেয়ে সার্থক, তিনিই এ দেশের সাহিত্য-ঐতিহ্যর ধারায় শেষ---সচেতন বা অচেতন---প্রতিনিধি।'
- লিখেছেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.