'আর্য-অনার্য দ্বন্দ্বে ভারতের রাজনীতি আবর্তিত হয়ে চলেছে অনেক কাল ধরেই। এম এস এস পান্ডিয়ান যেমন 'আউটলুক'-এ একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন এ নিয়ে। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল 'উত্তরের সাম্রাজ্যবাদের হিন্দু-হিন্দি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে রাবণের পুনরাবিষ্কার।' প্রবন্ধ শুরুই হচ্ছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির বিখ্যাত উক্তি দিয়ে, 'যদি আপনি রাবণকে অপমান করেন, তার মানে আমাকে অপমান করছেন।' করুণানিধির তীব্র সমালোচক হিন্দু মুন্নানির রামাগোপালন সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলেন করুণানিধি বিন্দুমাত্র
বদলাননি। তিনি ক্ষুব্ধই ছিলেন তার কিছুকাল আগে পেরিয়ার দ্রাবিড় কাজাগম-এর সদস্যরা রামের কুশপুতুল দাহ করায়। ওঁরা রামের কুশপুতুল দাহ করেছিলেন উত্তর ভারতে রামলীলাতে রাবণকে দাহ করার পালটা হিসেবে।
আর্য-অনার্য, উত্তর-দক্ষিণ, হিন্দু-দ্রাবিড় ব্রাহ্মণ-দলিত এইসব নানা বর্গে দ্বিভাজিত হয়ে দ্বন্দ্বটা চলে এসেছে ব্রিটিশ শাসন পরবর্তী যুগেও। সে দ্বন্দ্বের অন্যতম উপাদান থেকেছেন রাম-রাবণ। রামের চরিত্র এবং রাবণের চরিত্রও বিবর্তিত হতে থেকেছে দ্বন্দ্বের স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী। করুণানিধিই শুধু নয়, দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগম-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্নাদুরাই নিজেই একটি নাটক লিখেছিলেন 'নিদি থিবন মায়াক্কম' (নিথি দেবন মায়াক্কম- এই নামও চলে) নামে, ১৯৪৭-এ। এই ২০১৮-তে আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয়, তামিল স্নাতকোত্তর সিলেবাস থেকে সরিয়ে দিচ্ছিল নাটকটিকে। সে নিয়ে বিতর্ক হতে আবার ফিরিয়ে আনে। নাটকের নামটির বাংলা করলে মোটামুটি ভাবে দাঁড়ায় 'বিচারকের দ্বিধা'। দ্বিধা কীসের? তামিল সঙ্গম সাহিত্যের যুগের কবি কম্বন একটি রামায়ণ লিখেছিলেন বাল্মীকি রামায়ণ অবলম্বন করেই। লিখেছিলেন বলছি এই কারণে, কম্বন সে অর্থে অনুবাদ করেননি। তিনি তাঁর মতো করে বাল্মীকির রামায়ণ বলে যা সেকালে পরিচিত তার থেকে সূত্র নিয়েছেন। কাহিনি কাঠামোর প্রবল পরিবর্তন না করলেও চরিত্রের ক্ষেত্রে নানা স্বাধীনতা নিয়েছেন। তাঁর রাবণ, বাল্মীকির রাবণের থেকে অনেকটাই আলাদা। আমরা এখানে লক্ষ করি, যে প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের (১৯৪২) থেকে কম্বনের রামায়ণ তামিলদের অপমান করছে এমন একটি অবস্থান পেরিয়ার নিজেই নিয়েছিলেন তাঁর ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধিতার জায়গা থেকে। তিনি কম্বনের লেখা নিষিদ্ধ করা উচিত, পুড়িয়ে দেওয়া উচিত ইত্যাদি বলেছিলেন।'
বই- ধর্মযোদ্ধা রাম
লেখক- শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ