হাফিজের কবিতা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
‘‘যদি হাফিজের একটি গজল/ নিয়ে শুকতারা আশমানে মাতে/ যদি নাচে যীশুখ্রীস্ট সে-সুরে/ আশ্চর্যের কী রয়েছে তাতে?’’ এই বই থেকে তুলে-দেওয়া হাফিজের গজলেরই একটি অনুবাদে এই যে ছড়ানো আত্মস্তুতি, হাফিজ-প্রেমিকের কাছে তা কিন্তু একেবারেই অতিশয়োক্তি মনে হবে না। বস্তুত, হাফিজের গজল রসে-প্রকরণে একান্তভাবেই তাঁর নিজস্ব ও অননুকরণীয় এক সৃষ্টি। আপাতবিরোধী নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করে অনন্য এক সামঞ্জস্যে পৌঁছে যাওয়া, হাফিজ-পূর্ব গজলে ছিল না। গজলের ঐক্য ক্ষুণ্ণ না করেও হাফিজ তাতে এনেছেন প্রসঙ্গের ভিন্নতা। হাফিজের আগে সাদীর হাতে গজল পেয়েছিল তার প্রায় নিখুঁত, পরিণত রূপ। হাফিজ তাকে নিজের ছাঁচে নতুনভাবে ঢালাই করে যে-চেহারা দিয়েছেন তা প্রায় অসাধ্যসাধন বলা যায়।
হাফিজের কবিতার প্রথম বই ছাপা হয় কলকাতায়। ১৭৯১ সালে। আমাদের সৌভাগ্য যে, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে আনুমানিক সাড়ে ছ’শো বছর আগের পারস্য শহরের এক কালজয়ী কবির সৃষ্টিকে বাংলা ভাষার পাঠকদের হাতে তুলে দিতে অগ্রণী হয়েছেন। যে-কোনও অনুবাদই দুরূহ। কবিতা থেকে কবিতায় রূপান্তর তো আরও কঠিন কাজ। কিন্তু একজন প্রধান কবি যখন অন্য এক বরেণ্য কবির রচনা সম্ভোগ করে অনুপ্রাণিত হন অন্যের কাছে সেই সৃষ্টিকর্মকে তুলে ধরতে, তখন তাও হয়ে ওঠে অসাধ্যসাধনেরই এক ব্রত। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই অনুবাদ-কবিতাবলী সেই ব্রতেরই সার্থক এক উদ্যাপন। আশ্চর্য মমতায় ও দুর্লভ ক্ষমতায় তিনি হাফিজের কবিতাকে করে তুলেছেন বাঙালি কাব্যপিপাসুর পরম উপভোগের সামগ্রী।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি