জঙ্গলে জঙ্গলে
শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ
সেযুগে বনভূমি ছিল অতি দুর্গম এবং বিপদসংকুল। যাতায়াতের পথঘাট প্রায় ছিলই না, যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল সেইরূপ। বর্তমান বইটি পড়লে পাঠকরা বিশেষভাবে রোমাঞ্চিত হবেন। তৎকালীন জঙ্গলের বুকে কর্মময় জীবনযাত্রা যে কীভাবে চাকুরিজীবনে প্রতিফলিত হত তার একটি সুনিপুণ প্রতিচ্ছবি আমরা এখানে দেখতে পাই এবং আজকের উন্নততর পথঘাট ও শিল্পবিপ্লবে তাঁদের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটিও পাঠকমনকে নাড়া দেয়।
" আমরা সব চেয়ে ভয় করতাম হাতিকে। ঠাকুরানি পাহাড়তলির বাঁশবন, আর সেখান থেকে ভদ্রাসাই পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জঙ্গলের মোটা মোটা গাছের ছাল ছিল ওদের প্রিয় খাদ্য। সেগুলোকে আগুনে ঘিরে ফেললে ওরা কোথায় কোথায় যে ছড়িয়ে পড়বে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা ছিল না। হাতির দল দুলকি গ্রামের ক্ষেতখামার ধ্বংস করে জল খেতে আসত আমাদের নালায়। ইউসুফ বোসকে অনেকবার দেখিয়েছে এই উলিবুরু পাহাড়ের ঢালুর ওপর তাদের যাতায়াতের চিহ্ন- গাছের গায়ে গায়ে ক্ষতচিহ্ন আর ফুটবল আকারের ধূমায়মান মলের রাশি।
বাইসনের গতিবিধি ছিল নালা পর্যন্ত। আমাদের পাহাড়ে উঠে আসত না বড়ো একটা, কিন্তু একদিন গভীর রাত্রে বাঘের সঙ্গে এমন জোর লড়াই বেধে গেল যে মনে হল ক্যাম্পের ওপর এসে পড়ে আর কি!
বোস বলল, "বাঘের চেয়ে বেশি ভয় ভালুকের। যখন এই গাছের তলায় আশ্রয় নিই তখন ভাবিনি যে একদিন মহুয়া ফুলের গন্ধে যত রাজ্যের ভালুক এসে জুটবে। রাত্রে আলো না সঙ্গে নিয়ে এক পা-ও যাওয়া নিরাপদ নয়-"
কথা কণ্ঠলগ্ন হয়ে গেল। শুনতে পেলাম ধ্যাঙ্ক ধ্যাঙ্ক থ- সঙ্গে সঙ্গে বড়ো কোনো পশুর ছোটার শব্দ।- বোস বলল, "শম্বর ভয়ে পালাচ্ছে- নিশ্চয় বাঘ।” পরের দিন জে. এস. খাদানের ধারে রক্তের ছড়াছড়ি দেখে ঠিকাদার তেজবাহাদুরের মুনশি এসে খবর দেয়- "সাহাব, ইন্না খুন লড়াই মে ভি নেহি দেখা-"
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.