যখন সর্ষেতে ভূত
বিজয় শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
হঠাৎ খেয়াল পড়ল মেয়েটার লাল হ্যান্ডব্যাগটা এখনও ওর কাছেই, ওর হাতে ধরা প্লাস্টিকের থলেটার মধ্যে। সুমিত ঠিক করল থানায় ফোন করে রিপোর্ট করবে। মোড়ের মাথায় এসটিডি বুথে গিয়ে ফোনটা তুলল থানার নম্বরটা ডায়াল করার জন্য। থানার নম্বর ডায়াল করতে করতে ওর চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেল। ও পাশ থেকে কথা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু সুমিত কোনো কথা বলতে পারল না। হঠাৎ মনে হল প্রাথমিকভাবে খুনের দায়টা ওর ঘাড়ে চাপবে না তো? একটা ঠাণ্ডা স্রোত ওর শিড়দাঁড়া দিয়ে নেমে গেল। ফোনটা নামিয়ে রেখে বাইরে এল। ভিআইপি রোডের মোড়ে এসে ও দিশেহারা হয়ে গেল। কি করবে ঠিক করতে পারছিল না। ও কি তাহলে বাড়ি চলে যাবে? খুনটা আজ রাতে হয়তো ধরা পড়বে না। কাল তো পড়বে, তখন? দারোয়ান তো ওর কথা বলবেই। সুমিত বুঝল ও ব্যাপারটায় জড়িয়ে পড়েছে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে একটা সিগারেট ধরালো ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করবে বলে। দিয়াকে জানানো যাবে না। তাহলে এখনই ও অস্থির হয়ে পড়বে। গুহবাবুর কথা মনে পড়তেই সুমিতের বুকটা একটু হালকা হল। গুহদাকে না জানিয়ে ও বোকার মত থানায় ফোন করতে যাচ্ছিল। নিজেকেই দুটো থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করল। তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বার করে লোকজনের থেকে দূরে গিয়ে গুহবাবুকে ধরল,
গুহদা, কি করছ?
উক্ত অংশটি বিজয় শঙ্কর মুখোপাধ্যায় রচিত "যখন সর্ষেতে ভূত" বইয়ের 'নেপথ্যের নায়ক' গল্পটি থেকে নেওয়া । ঋতবাক সম্পাদিত এই বইটি একটু অন্য গোত্রের। এটি গোয়েন্দা গল্প। নাটকে বা সিনেমায় কমিক চরিত্রে অভিনয় দেখতে যেমন সোজা, সফল অভিনয় ততটাই কঠিন। গল্পের মধ্যে সফল গোয়েন্দা গল্প লিখতেও সেরকম মুন্সিয়ানা লাগে। গল্প যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, কিছু লোভী মানুষ তাৎক্ষণিক লাভের জন্য মানুষ খুন করতেও পিছিয়ে যাচ্ছে না, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে চাপের মধ্যে থেকেও কিছু পুলিশ অফিসার একটি বড় ক্রিমিনাল গোষ্ঠীর চক্রান্ত ভাঙবার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, এই সব পূর্বাপর কাহিনী বলে যাওয়ার মধ্যেও একটি যোগসূত্র রেখে যাওয়া - যাতে গল্পের বিশ্বাস যোগ্যতা না হারায় এবং সাক্ষ্য প্রমাণও মিলে যায়। যা পাঠকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি