'সূর্য পশ্চিম দিগন্তে যাত্রা করেছে। আকাশে লেগেছে দিন শেষের রঙের ছোঁয়া। সেই নরম ম্লান আলো বড়ো অপরূপ করে তুলেছে চারিদিক। নদীর বুকে জলের উপরেও পড়েছে সেই রাঙা আলোর রাশি। নদীটির নাম নৈরঞ্জনা। আসন্ন সন্ধ্যার মুখে নদীর তীরে বালির চরে পা ছড়িয়ে বসে ছিল দুই ভিক্ষুণী। তাদের একজনের নাম ইসিদাসী ও অন্যজনের নাম বোধি। বোধির বয়স এখনও কুড়ি বছর হয়নি, তার মুখটিতে কৈশোরের লাবণ্যমাখা। এখনও প্রব্রজ্যা পায়নি সে, উপসম্পদা নিয়ে কোশলরাজ্যের পূর্বারাম ভিক্ষুণী সংঘে থাকে।
ইসিদাসীর বয়স প্রায় তিরিশ
পেরিয়েছে। সে সংঘে যোগ দিয়েছে সংসার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে। তার জীবনে অনেক বেদনাবহ ইতিহাস আছে, সে একটু গম্ভীর প্রকৃতির। কথা খুবই কম বলে, বলা চলে কথাই বলে না প্রায়, এবং যখনই দু-একটা সামান্য কথা বলে, সেই সময় তার শরীর সজাগ ও কঠিন হয়ে ওঠে।
বোধি ইসিদাসীর সঙ্গে মগধ রাজ্যের রাজগৃহ নগরে চলেছে। সুদূর কৌশম্বী নগর থেকে নানা পথ ঘুরে অবশেষে তারা এসেছে রাজগৃহে। আজকের রাতটা। বেণুবনের ভিক্ষুণী বিহারে থাকার ইচ্ছে তাদের। তবে এখন বৌদ্ধ সংঘগুলিতে ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায়, আগত সকলকে অনেক সময় বিহারে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন আগত ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীদের রাতে কোনো পর্বত কন্দরে অথবা কোনো উদ্যানে বা গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। গৃহস্থদের আবাসে ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীদের থাকার নিয়ম সংঘে প্রতিষ্ঠিত নয়।'