বই - মিনিমালিস্ট
লেখক- মাশুদুল হক
'ভার্সিটির কলাভবন। কামরুল স্যার ক্লাস নিচ্ছেন।
স্যার ক্লাসে ঢুকেই আমাকে বললেন, 'ক্লাস শেষে আমার রুমে আসবা, তোমার সঙ্গে কথা আছে।'
ডিপার্টমেন্টাল হেড যখন সবার সামনে এ-ধরনের আমন্ত্রণ জানায় তখন ব্যাপারটা একই সঙ্গে কিছুটা ভীতির এবং উলটো পাশে বাকিদের ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি পাওয়ার অহমিকার। আমি প্রমাদ গুনলাম। মনে করার চেষ্টা করলাম সাবকন্টিনেন্টাল মাইনরিটি কোর্সে আমি উলটা-পালটা কিছু লিখিনি তো! স্যার খুব মনোযোগ দিয়ে প্রতিটা খাতাই পড়েন।
মানসিক এ অবস্থায় লেকচারে মনোযোগ দেওয়াটা কঠিন। স্যার শুরু করলেন, 'তোমাদের গেল ক্লাসে উপমহাদেশের রায়টগুলো সম্পর্কে আইডিয়া দিয়েছিলাম। তোমাদের কী মনে হয় এগুলোর চেয়ে জঘন্য কোনো ঘটনা এই জনপদের জীবনে আছে?' 'স্যার পলিটিক্যাল যেসব কন্সপিরেসি আছে সেগুলো?'
'বাদ দেও মিয়াঁ।' স্যার নিজামের উত্তরকে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে উড়িয়ে দিলেন। 'পলিটিশিয়ানরা কন্সপিরেসি করবে এটাই তো স্বাভাবিক।'
'কিন্তু স্যার সে-সব কন্সপিরেসিই তো রায়টকে উসকে দেয়।' আমি এবার একটু গলা মেলালাম।
'কথাটা সবসময় সত্যি না। যেমন ধরো, তোমার মনে হতে পারে দেশ বিভাগের সময় হিন্দু-মুসলমানদের যে বিশাল দাঙ্গা লেগেছিল, সেটার কারণ ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মানছি এটা ঠিক। এই উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ খুন হয় সে-সময়ে। প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ এই কুৎসিত প্রতিহিংসার বলি হয়। কী আশ্চর্য তাই না, কোথায় ব্রিটিশরা চলে যাচ্ছে স্বাধীনতা দিয়ে, আনন্দ-ফুর্তি করো, তা না লেগে গেল প্রতিবেশী হত্যায়। লুট-ধর্ষণ এসবের তো হিসেবই নেই। আর এগুলো কারা করেছে বলো তো? একদম বেসামরিক জনগণ, নিরীহ আমজনতারা। যে হয়তো কোনোদিন গলা উচিয়ে কথাও বলে না, সে দা হাতে পাশের বাড়ির ভিন্ন ধর্মের পরিবারের ছেলেকে খুন করে ফেলল, মেয়েকে ধর্ষণ করা শুরু করল। চিন্তা করো ব্যাপারটা। মানুষ এ-পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য প্রজাতি মনে রেখো।'
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি