নাটকসমগ্ৰ ১
ব্রাত্য বসু
একথা অবিদিত নয়, বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত লেখকরা নাটক রচনায় নিরুৎসাহী। নাটক লিখতে তাঁদের অনীহা। শক্তিশালী ও যশস্বী লেখকদের অনীহা সত্ত্বেও নাটক লেখা হয়। যাঁরা লেখেন তাঁরা মূলত সমসময়ের মঞ্চের প্রয়োজনে নাটক রচনা করেন। ফলে সেই সব নাটকে, জীবনের আকণ্ঠ যন্ত্রণা ও আনন্দ, আত্মানুসন্ধান ও আত্ম-আবিষ্কার, প্রয়োজনের আঘাতে প্রায়শই প্রতিহত হয়। অথচ 'মানুষের বা সমাজের যে কোনও পরিস্থিতি বা সমস্যার তন্ময় উপলব্ধির জন্য-মানুষের নানা সম্বন্ধের যে সূক্ষ্ম গভীর বিন্যাস প্রয়োজন, সেই স্তরেই নাট্যকারের' এবং নাটকের বিশেষ ভূমিকা। বাংলা সাহিত্য ও অভিনয়-শিল্পের ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাসে কোনও কোনও নাট্যকার 'তাঁর সমকালীন থিয়েটারের চরিত্রধর্মকে অস্বীকার করে এমন এক নাট্যসত্তা সৃষ্টি করেন- যাকে আত্মস্থ করতে গিয়ে সমকালীন থিয়েটারকে তার বেড়া ভাঙতে হয়। নিজেকে ছড়িয়ে দিতে হয়। নিজেকে বাড়াতে হয়।' ব্রাত্য বসু সেই কোনও কোনও বিরল নাট্যকারদের মধ্যে একজন, এক প্রতিশ্রুতিময় নবীন প্রতিভা।
একদিকে তিনি যেমন বাংলা থিয়েটারের একনিষ্ঠ কর্মী, তেমনই জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সংপৃক্ত নানা উল্লেখযোগ্য নাটকের স্রষ্টা। তাঁর 'অরণ্যদেব', 'শহর ইয়ার', 'ভাইরাস-এম', 'উইঙ্কল-টুইঙ্কল' প্রভৃতি নাটক বাংলা রঙ্গমঞ্চে শুধু জনপ্রিয়ই নয়, আধুনিক নাট্যসাহিত্যের ধারায় নানা তাৎপর্যে চিহ্নিত এক একটি মৌলিক নাটক। তাঁর 'অশালীন' নাটকটিকে সমালোচকরা বলেছিলেন, প্রথম পোস্ট মর্ডানিস্ট বাংলা নাটক। এরই পাশে রাজনৈতিক ফ্যান্টাসি, প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক, সংগীত ও জীবনের বন্ধন, মূল্যবোধহীনতা, বিপ্লব আর প্রেমের দ্বন্দ্ব, সময় ও সভ্যতা ইত্যাদি নানা বিষয় তাঁর নাটকে কল্পনায়-রূপকে-প্রতীকে-বাস্তববিন্যাসে উঠে এসেছে। মঞ্চমুখ একচক্ষু নাটক রচনার চেয়ে, মানুষের জীবনভাবনা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নাটকের বহুবিস্তৃত ভূমিকাকে ব্রাত্য মান্য করেছেন। ফলে তাঁর নাটক একই সঙ্গে মঞ্চসফল ও রসোত্তীর্ণ।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি