বইয়ের নাম- নেতাজী রহস্য
লেখক- প্রসেনজিত নাথ
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস – এই নামটা ছোটবেলা থেকেই একটা শিহরণ জাগায়, কিন্তু কোনোদিন পূর্ণাঙ্গ জীবনী বা ইতিহাস পাইনি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সব চেয়ে বেশি অবদান ছিল, কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন পরে পদত্যাগ করেন, ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি করেছিলেন, আইসিএস-এ চতুর্থ হয়েছিলেন ও পরে ইংরেজের গোলামী করেননি ও ১৯৪৫ সালে তাইহকুতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। এর চেয়ে বেশি কিছু আর জানা যায় না।
এটুকুই জানা যায় যে, নেতাজির মৃত্যু নিয়ে আজ অব্দি তিনটি কমিশন গঠন হয়েছে। প্রথম দুটো বিমান দুর্ঘটনাকেই সত্য বলে জানিয়েছে এবং সরকার অতি দ্রুততার সাথে সেই রিপোর্টগুলো গ্রহণ করেছে। কেবল শেষ কমিশন বলেছে বিমান দুর্ঘটনা আদৌ হয়নি আর সে রিপোর্ট আজ অব্দি সরকার গ্রহণ করেনি।
নেতাজীর কথা বলার আগে কটা কথা বলে নেওয়া জরুরী কারণ আমরা এখনও নেতাজীকে একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বলেই জানি। যে ইতিহাস আমাদের পড়ানো হয় তাতেই আমরা জানি যে সেই প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা জাতি ভারতকে আক্রমণ করেছে, রাজত্ব করেছে ও লুঠ করেছে। এর কারণ কিন্তু বলা হয় না উল্টে বলা হয় ভারত খুব গরীব, অভুক্ত ও অনুন্নত দেশ ছিল। তাই যদি হবে তাহলে বাকি পৃথিবীর লোলুপ দৃষ্টি কেনো ভারতের ওপর ছিল? আর লুঠ করেই বা কি নিয়ে গিয়েছিল যদি আমরা নিজেরাই খেতে না পেতাম? অনুন্নত যে ছিল না তার প্রমাণ বহু পাওয়া যায়, আর্যভট্ট, পাণিনি এদের জীবনীতে। মূল ভারতবর্ষ (যা থেকে পরে পনেরো বা ষোলোটা রাষ্ট্র গঠিত হয়) আসলে উন্নত এবং ধনী ছিল কিন্তু ভেতরে ভেতরে বহুধা বিভক্ত ছিল, যেটার সুযোগ বাইরের লোকেরা নিয়েছে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, গোটা এশিয়াতেই ইউরোপের আধিপত্য কায়েম হয় পরবর্তীতে। আর নেতাজী চিরজীবন এই ইউরোপীয়ান আধিপত্যের সমাপ্তি চেয়েছেন এশিয়া থেকে।
আসলে নেতাজীকে আমরা অনেক ক্ষুদ্র পরিসরে দেখি বা আমাদের দেখানো হয়। তিনি ভারত বলতে বর্তমানের পনেরো ষোলোটা রাষ্ট্র নিয়ে যে ভারতবর্ষ ছিল সেটাই বুঝতেন আর সকল দেশের সেরা হিসেবেই দেখতে চাইতেন। তিনি ভালোই জানতেন গান্ধীর অসহযোগ কি জিনিস ও কারণ কি, আর আন্দোলন বা যুদ্ধ ছাড়া ইংরেজ তাড়ানোর পথ নেই। হিটলার বা মুসোলিনিরাও ব্রিটিশদের ক্ষমতা খর্ব হওয়া দেখতে চাইতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নেতাজী তাই হাত মিলিয়ে ছিলেন হিটলারের সাথে, তোজোর সাথে। কারণ আর কিছুই নয়, মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে একজোট হওয়া।
কিন্তু রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে অংশ নেয়নি, হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করার আগে অদি। কিন্তু তাদের কাছে তিনি মাথা বিকিয়ে দেননি। এই জায়গাটাতেও মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বলা হয় ইংরেজরা গেলে জার্মানরা বা জাপানীরা আসতো নেতাজীর এই ভুলের জন্যে। ঘটনা কিন্তু অন্য কথা বলে। হিটলারের পরাজয়ের আগে যেটুকু ঘটেছিলো তা হচ্ছে নেতাজীকে বা রাসবিহারী বসুকে ওইরকম সাহায্য অন্য কেউ করেনি। আর তোজো আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ইংরেজদের কাছ থেকে দখল করে নেতাজীর হাতে সমর্পণ করেছিল আর বলেছিলো তুমি কোনো দেশ ছাড়া রাষ্ট্রনায়ক নও, এই নাও তোমার দেশ এবং নেতাজী আন্দামানে ভারতের পতাকা তুলেছিলেন। এছাড়াও তোজো সেনাবাহিনী, বিমান ইত্যাদি দিয়ে নেতাজীকে সাহায্য করেছিলো। নেতাজী আর তোজোর মধ্যে চুক্তি ছিলো আজাদ হিন্দ বাহিনী যে জায়গা দখল করবে সেখানে ভারতের পতাকা উঠবে, কোনো জাপানি সেনা যদি জাপানের পতাকা ওঠায় তাহলে তাকে গুলি করে মারা হবে।
জার্মান, জাপান নেতাজীকে যেভাবে নিঃশর্ত সাহায্য করেছে তার কোনো মূল্যায়ন আজও হয়নি। নেতাজী কিন্তু সেই মাপেরই নেতা ছিলেন যার কথায় হিটলার, তোজোরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে যিনি আজাদ হিন্দ সরকার বানিয়ে ছিলেন যার রাষ্ট্রনায়ক তিনি ছিলেন, আজাদ হিন্দ ব্যাংক ছিল, কারেন্সি নোট ছিলো, পৃথিবীর এগারোটা (মতান্তরে বারোটা) দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে মান্যতা দিয়েছিল যার মধ্যে রাশিয়া আছে। একটা সরকার এর যা যা থাকলে অন্য দেশ স্বীকৃতি দেয় সবই তাঁর ছিল।
এরকমই আরো তথ্য নিয়ে প্রকাশিত প্রসেনজিত নাথের 'নেতাজী রহস্য'
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.