বই - উল্কাপাত ও মৃত্যুরহস্য ( বাংলা থ্রিলার উপন্যাস)
লেখক - আতিফ মণ্ডল
'কামোদ্দীপক বারাঙ্গনার শিহরিত হাতের ছোঁওয়ায় সব্যসাচী কেমন গুটিয়ে যেতে লাগল। শিহরিত হয়ে সে জড়সড়ো হয়ে চুপটি করে ছেলেটির পাশে নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইল আর মনে মনে বলতে লাগল, হে ঈশ্বর, এ সর্বনেশে কামনাময়ী বারাঙ্গনার হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। তার ললাট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘামে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলে মেয়েটি সেই ঘর্মকণা আঙুলে মেখে সব্যসাচীর জামা ধরে তার বুকের কাছে টেনে এনে তার চোখে চোখ রেখে বলল, একে যে এখনও কেউ ছোঁয়নি সুমনদা। সম্পূর্ণ টাটকা। দ্যাখো কেমন ভিজে বেড়ালের মতো কাঁপছে। একে আজকের জন্য আমাকে দাও না সুমনদা। দীর্ঘদিন এমন মাল কাছে পায়নি।
বিরক্তির স্বরে সুমন বলল, বললাম না এ বুকিং হয়ে গেছে। ছাড়।
- বেশি সময় নেব না। তারপর তুমি নিয়ে যেয়ো। দাও না একে।
- রাঙা মাসিকে বলব তুই অন্যের কাস্টমার হাতাচ্ছিস?
মেয়েটি এবার পথ ছেড়ে বলল, কী করবে তোমার রাঙা মাসি। সব সময় রাঙা মাসির ভয় দেখাও কেন, হ্যাঁ? কোন দিন দেখবে ও মাগির ভাতার নিয়ে আমিই চম্পট দিয়েছি। বলে মেয়েটি একরকম ক্রোধের বশে দম দিয়ে সিগারেট টানতে লাগল।
এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সুমন সব্যসাচীকে নিয়ে চলে গেল। যেতে যেতে সে সব্যসাচীকে জিজ্ঞেস করল, আপনি এখানে নতুন?
মাথা নেড়ে সব্যসাচী বলল, হুম।
- সেটা এখানে কাউকে বুঝতে দেবেন না।
- কেন?
- বেশ্যা পাড়ায় এসে অমন জড়সড়ো হলে কিন্তু কপালে বিপদ আছে। কাছে টাকাপয়সা একটাও ধরে রাখতে পারবেন না। সব এরা উজাড় করে নেবে। নতুন ছেলে পেলে এরা মনে করে ধনকুবের হাতে পেয়েছে। সর্বস্ব লুট করে নেবে। তার এ সর্বস্ব লুট সাবধানবাণীতে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সব্যসাচী একটি আলোকসজ্জায় সজ্জিত গৃহে প্রবেশ করল।
তিনতলা বাড়ি। সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য ঘর। সুদর্শিতা রমণীদের অভাব নেই। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠেই দু-তলায় বড়ো একটি হলঘর মতো চোখে পড়ে। এটি বোধ করি গণিকা প্রদর্শন ও দরদাম কথার অফিস। জিনিস দেখে দাম ঠিক করার কেন্দ্রস্থল। চারিদিকে চেয়ার সোফা পাতানো। ঘরের মাঝ বরাবর এক ধারে একটি গাদিই মোড়া চেয়ার ও তার সামনে কাচের টেবিল। টেবিলের উপর থালা ভরতি পান, একটি ডায়ারি ও দুটি কলম ও একটি ফটো অ্যালবাম। আর টেবিলের অপর পাশে আরও দুটি চেয়ার রাখা। লাল নীল আলোয় ঘরখানি একেবারে পরিপূর্ণ সঙ্গে চিত্তাকর্ষিত করা গান। এখানেও অসংখ্য যুবতি ও মধ্য বয়স্ক রমণীতে ভরতি। হাসি তামাশায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তারা দাঁড়িয়ে আছে। সোফায় বসা কিছু লোককে দুই তিনটে যুবতি গায়ে ঢলে পড়ে গ্লাসে মদ ঢেলে দিচ্ছে আর তারা চরমানন্দে সেগুলো পান করছে। যেন অপরার হাতে অমৃত পান, দৈব ভক্ষণ। সময়ান্তে নিত্যনতুন অস্টমার আসছে আর পছন্দ মতো এক জনকে বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট ঘরে চলে যাছে। কেউ আবার তৃপ্তি মিটিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। নেশাগ্রস্ত কাউকে আবার জোর করে ঘর থেকে বাইরে আনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সে এক সর্বনেশে আয়োজন।'
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য