আমাকে কাশ্মীর ভেবে
লেখক : বেবী সাউ
সমসময়ের যন্ত্রণাকে কলমে বহন করে কবি এক একটি অক্ষরে তার অনুবাদ করেছেন এক অন্তর্গত বিপন্নতায়।এমন একটা সময়ে কবিতাগুলি লেখা, যখন আগুন জ্বলছে মণিপুরে। কাশ্মীরের সেই ভয়াবহ দিনগুলির কথাও মনে পড়ছে আমাদের, যখন গ্রামে গ্রামে চলত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বর্তমানে যে ফ্যাসিস্ট ভারতবর্ষে আমরা বসবাস করছি,সেখানে মানুষের মূল্য কম। মানুষের স্বাধীনতা এখানে বিপন্ন। কিন্তু কবি তো উচ্চকিত ভাবে এ কথা বলার জন্য কবিতা লিখছেন না। তাই কাশ্মীরের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষিতা নারীর বয়ান, গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যু, কলবুর্গির মৃত্যু,ভারভারা রাওকে অন্তরীন রাখা এবং স্ট্যান স্বামীকে এক অর্থে মেরেই ফেলা। পুরুষতান্ত্রিকতা এবং ভুবনায়নের হিংস্র কাটাছেঁড়ায় ক্রমাগত রক্তাক্ত হচ্ছে আমাদের দেশ। আমাদের শিকড় নেই কোনও। আমরা কাশ্মীরের মতোই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আতঙ্কে বসবাস করছি গুজরাতের সেই পাড়ার মতো, যাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে দাঙ্গায় উন্মত্ত হিন্দু মৌলবাদীরা হত্যা করেছিল। মিলেমিশে যাচ্ছে ইরানে, বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদের দ্বারা আক্রান্ত মানুষের জীবন। মিলেমিশে যাচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে বিধ্বস্ত মানবতা। গাজায় ইজরায়েলের আক্রমণে মৃত শিশুদের মুখ। কবি সম্পূর্ণভাবেই লীন হয়ে গেছেন মানুষের জীবনযন্ত্রণার সঙ্গে। কিন্তু, এ এক এক ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক বয়ান, যা কবিতার মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব সময়কেই ক্ষতবিক্ষত করছে। উচ্চকিত কণ্ঠে নয়, বরং তার কাব্যবয়ানের ভিতর রয়েছে এক নিষ্ঠুর শূন্যতা। আর সেই রক্তাক্ত ক্ষতের উপর প্রলেপ দেওয়ার কিছু অবশিষ্ট নেই আর। বর্তমান সময়ের এই ভয়ংকর বাস্তবতায় কবি রচনা করেছেন প্রতিরোধের এক কাব্যিক সন্দর্ভ। কথোপকথন করেছেন পাঠকের সঙ্গে। সমসময়কে মিশিয়ে দিয়েছেন চিরসময়ের যন্ত্রণায়। প্রেম, আদর, ভালোবাসা, প্রতিরোধ এবং নির্মম অত্যাচারের ধ্বনি এবং প্রতিধ্বনির মধ্যে কবির আর্তনাদ মিশে গেছে অবরুদ্ধ শব্দের ভিতর। । একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসকে তিনি বহন করেছেন এই কাব্যগ্রন্থে। সময় যেন কবিতার সামনে বসে রয়েছে। ঠিক যেমন মৃত্যুর সঙ্গে বার্গম্যানের সেভেন্থ সিলের নায়কের দাবা খেলা শুরু হয়। এক আশ্চর্য সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে, শীতল সময়ের কাছে কবি লিখে রাখেন তাঁর অন্তর্দহন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.