বোহেমিয়ানের সাধুসঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড)
রাজাধিরাজ ভট্টাচার্য্য
'বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহাকাশ পথে মানুষ ক্ষণিকের যাত্রী। জীবন কতক্ষণের আমরা জানিনা। তবে, বেঁচে থাকা প্রতিটা মুহূর্ত অসীম সম্ভাবনাময়। যে মানুষের যতটুকু নিজেকে চেনার বোধ হয়েছে, সে মানুষ ততই সিদ্ধিপ্রাপ্ত। ঠিক এই কারণেই বিজ্ঞানের অনেক ওপরে দর্শন ঠাঁই পায়।
জীবনের বেশ কিছুটা বছর আমি বোহেমিয়ানের মত কাটিয়েছি। অজস্র শ্মশানে মৃতদেহ সৎকার ছাড়াও, বিভিন্ন তপোবনে সাধুসঙ্গ করেছি অগুনতি। একের পর এক আলাপ হয়েছে উচ্চকোটি মহাসাধক থেকে শুরু করে, দুশ্চরিত্র লম্পট ভেকধারী মানুষের। আজকাল অন্য ধর্মের মানুষও শরীরে গেরুয়া জড়িয়ে বিভিন্ন মন্ত্র মুখস্থ করে ভিক্ষাবৃত্তি করে। ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। এদের প্ররোচনায় পা দিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হন। যে সাধু-সন্ন্যাসীর চাহিদা বেশি, তাঁদের সোজা এড়িয়ে চলুন।
কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা, রটনা এবং কল্পনাকে আশ্রয় করে সৃষ্টি করেছি তিনটি গল্পের। কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি আমি জড়িয়ে ছিলাম বলে, নিজেকে নিয়ে লেখা এই কাহিনী সমূহ আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে। এই বইয়ের প্রথম পর্বের অভাবিত সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্ব লেখার সাহস পেয়েছি। সকলের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি। স্থান-কাল-পাত্র সবই কাল্পনিক।"-------রাজাধিরাজ ভট্টাচার্য্য
-------------
সদ্য-মৃত চিতার সৎকার কার্য ও সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর সংস্কার কার্যের মূল উদ্দেশ্য অভিন্ন। সৃষ্টি আর অনাসৃষ্টি একই ভাবে চলে। আমরা কখনো কাঁদি, কখনো হাসি। বাকি জীবন মুখোশ পরেই চলে যায়। অভিনয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কখনো আপনি মা-বাবা, কাকা, পিসি, স্বামী ইত্যাদি নামে নিজের স্বরূপ বদলে ফেলেন। জিবাত্মা একই থাকে। তাকে আবার ফিরে আসতে হয় নতুন নামে, নতুন সম্পর্কে। জীবন আসলে অনন্ত। আমরা সবাই মৃত্যুঞ্জয়ী।
নিয়ন আলোর ওপর ভরসা রেখে মোটরসাইকেল হাওয়া কেটে এগিয়ে চলেছে। এবারে যাত্রা পশ্চিমমুখী। শহরের গন্ধ, মাটির রং, বদলে যাওয়া মানুষের চরিত্র, নিত্যনতুন রান্নার স্বাদ পাল্টে এগিয়ে চলেছি মধ্যবয়সী আমি। গঙ্গাজল এবং মাটির স্পর্শ থেকে বহু দূরে যাত্রা শুরু করেছি অমরকন্টক পর্বতমালার দিকে।
সাতচল্লিশ রাত্রি এবং আটচল্লিশ দিন বাইক টেনে প্রায় এক সপ্তমাংশ ভারতবর্ষ ঘুরে পৌঁছেছি নর্মদার তীরে। সুদীর্ঘ যাত্রাপথে কত মা, বোনের হাতের রান্না খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। হোটেলে থেকেছি কম, সাধারণ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। শিখেছি সহজ সরল ভাবে বেঁচে থাকার নিত্যনতুন পন্থা। পারিবারিক বন্ধনের টান অনুভব করেছি, নিজেকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়েছি। মধ্য বয়সের এই বোহেমিয়ানতা আমার বেঁচে থাকার রসদ। এ জীবনে অর্থ সঞ্চয় প্রচুর হয়েছে, অতৃপ্ত জীবাত্মা এবারে বাঁচতে চায় নিজের মতো করে। মৃত্যুকালীন সময়ে বাবা একটা কথা বলে গেছিলেন, "জীবনের যা ইচ্ছা হয় কর, চরিত্র যেন আমৃত্যু ঠিক থাকে।" বাবাকে যে কথা দিয়েছিলাম, সে কথা বেঁচে থাকতে বদলাবেনা।
লেখক পরিচিতি :
জন্ম সত্তর দশকের শেষে। জন্মস্থান কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে হাসপাতালের কেবিন। নাম থেকে মর্জি, সবেতেই 'রাজা'। বেড়ে ওঠা হাওড়া সালকিয়ার কর্মব্যস্ত অলিতে গলিতে। পড়াশুনা থেকে ডেপোমি, উদ্দেশ্যবিহীন ভ্রমণ থেকে বেহিসেবি জীবন যাপনের পাঠ, সবই শেখা সালকিয়া হিন্দু স্কুল, সিটি কলেজ, হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ও বাবুঘাটের জেটিতে । প্রকান্ড একান্নবর্তী পরিবার। সালকিয়র চন্ডীবড়ি। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত চারশো বছরের প্রাচীন বিগ্রহ, হয় দুর্গাপুজো। পৈত্রিক সূত্রে 'হার্ডওয়ার' লৌহ ব্যবসায়ী। তবে মেজাজ সূত্রে নিজের শখের ব্যপারি। কখনো গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে উর্দু শেখা, কখনো বাড়িতে না বলে শতাব্দী-প্রাচীন বুলেটে চড়ে হিমালয় পালিয়ে যাওয়া। দীর্ঘকাল ধরে আধ্যাত্ত্বিক চর্চা ও দর্শনে যুক্ত। হই হই করে গান বাজনা, প্রকান্ড ক্যানভাসে। ছবি আঁকা, হা হা করে হাসা। পছন্দের বিচরণ ক্ষেত্র দুর্গম হিমালয়ের আনাচে-কানাচে।
এইতো জীবন, কালীদা। জীবনে পুড়িরেছেন অসংখ্য মড়া। করেছেন প্রচুর সাধুসঙ্গ। অসাধুসঙ্গ। মোগলাই রান্নার একনিষ্ঠ শিল্পী রাজা নবাবি প্রেমে আবিষ্ট হয়ে বিবাহও করেছেন লখনৌর কনা অনুশ্রীকে। বর্তমানে কিশোর পুত্র 'ধীরাজ' এর পিতা রাজা'র লেখক হিসেবে পুনর্জন্ম 'রাজাধিরাজ নামে। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ অহম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই পাঠকপ্রিয় রাজাধিরাজের লেখার ধাঁচ একেবারে স্বতন্ত্র, প্রাচীন বেনারসের গলির মতোই দর্শন ও বৈচিত্র্যে পরিপুষ্ট।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.