গভীর নির্জন পথে
সুধীর চক্রবর্তী
চলতি কথায় যাদের বলে বাউল বৈরাগী দরবেশ সাঁই কিংবা সহজিয়া উদাসীন তাদের কি সত্যিই জানি তেমন করে? দেড়শো বছর আগে উইলসন সাহেব আর অক্ষয়কুমার দত্ত এমনতর নানা উপাসক সম্প্রদায়কে শনাক্ত করে তাদের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত জানিয়েছিলেন। তারপরে কিন্তু এরা হারিয়ে গিয়েছিল গ্রামের গহনে—গৌণধর্ম বিষয়টাই যেন গৌণ হয়ে পড়েছিল বাঙালি বিদ্বৎসমাজে। সেই গভীর নির্জন পথে একাকী পায়ে হেঁটে, দু দশক ধরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম-বর্ধমান-কুষ্টিয়া-মেহেরপুরের গ্রামীণ পরিমণ্ডল ঢুঁড়ে, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন ধারার লেখনীতে এবারে লেখক ধরেছেন সেই বিচিত্র ভুবনের অন্তর্গহন বাণী। সারাদেশে ছড়ানো-ছিটানো বিচিত্র সব গৌণধর্ম আর তার সাধক-সাধিকা, রহস্যসংকুল তাদের দেহতত্ত্ব ও সাধনা, সংকেতিত ভাষার ব্যবহার, দ্ব্যর্থক গান আর জীবনযাপনের কবোষ্ণ বৃত্তান্ত বাংলাভাষায় আগে কখনও শোনা যায়নি। পুথিপড়া লোকসংস্কৃতিচর্চার আড়ালে, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজ-নৃতত্ত্ববিদ্যার সমান্তরালে অন্তঃশীল রয়ে গেছে এক মায়াবি বিশ্ব। গ্রামে গ্রামে আর গানে গানে গাঁথা সেই লোকায়ত যাপনের আখ্যান যেন জাদু-বাস্তবের ঢঙে রূপ পেয়েছে এ-বইয়ের বিন্যস্ত ছটি অধ্যায়ে। উঠে এসেছে এমন সব মানুষ, চেনা সমাজে যাদের কোনও আদল নেই। শোনা গেছে এমন সব গানের ভাষ্য ও বয়ান যা অপূর্বকল্পিত। ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশেই ‘গভীর নির্জন পথে’ বাঙালি পাঠকদের চমকিত করেছিল। বই আকারেও এক দশকের বেশি জনপ্রিয় এই রচনাধারা খুলে দিয়েছে বাংলার সমাজ সংস্কৃতিচর্চার এক নতুন পথ—বাংলা গদ্যশৈলীরও এক নবনিরীক্ষা।