জ্যোৎস্নাময়
সুবর্ণ বসু
বর্তমান সময় থেকে ষাট বছর আগে পালু নামে এক নিঃসঙ্গ মুখচোরা যুবক গিয়েছিল দেউলনগর গ্রামে। কারও সঙ্গে মিশত না সে। একা একা ঘুরে বেড়াত রাস্তায়, জঙ্গলে, জলের ধারে। তার প্রেমে পড়েছিল গ্রামেরই মেয়ে সুভা। পালু ফিরিয়ে দেয় তাকে। তার পর এক দিন নিঃশব্দে চলে যায় দেউলনগর ছেড়ে। তাকে কখনও ভুলতে পারেনি সুভা। অন্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ে সংসার সন্তান সব কিছু হলেও সুভার হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল থেকে গিয়েছিল পালু। সুভার চোখে পালু ছিল চাঁদের মতো স্নিগ্ধ, সুন্দর আর গম্ভীর এক পুরুষ। তাই সে পালুর নাম রেখেছিল জ্যোৎস্নাময়। সুভার ভাল নাম সুপ্রভা। এখন তাঁর বয়স প্রায় আশি। এবার দেউলনগর গ্রামের লাইব্রেরি উদ্বোধন করতে কলকাতা থেকে কয়েক জন লেখক-কবি সেখানে গিয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানে এসে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন সুপ্রভা। তার পর একটু সুস্থ হলে কলকাতা থেকে যাওয়া তরুণ লেখক অয়নকে ডেকে পাঠান। অনুরোধ করেন তাঁর জীবনের কাহিনি লিখে দিতে, যে কাহিনির নায়ক সেই জ্যোৎস্নাময়। সেই আশ্চর্য চরিত্র, যার স্মৃতি আজও মিশে আছে জটেশ্বরীর দেউলের রহস্যময়তায়, যশোদাদুলালের স্মিতমুখে আর হরিসায়রের বাতাসে ভেসে থাকা জলজ লতাগুল্মের মায়াবী গন্ধে। পাঁচ-পাঁচটা যুগ পেরিয়ে সেই প্রাচীন জ্যোৎস্নার আলো যেন ছড়িয়ে পড়েছে বর্তমানেও। যে আলো স্পর্শকের মতোই ছুঁয়ে আছে এখনকার স্থান-কাল-চরিত্রকে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি