মরুদ্যানে শ্বেতপদ্ম
ভূদেব চন্দ্র ভৌমিক
--------- সেই শুরু। এর পরেই শুরু হয়েছিল আমার দ্বৈত জীবন। আমাকে যে ভ্যালুয়েবল অ্যাসেট করে তৈরি করে নিয়েছিল ওই পাচারকারি দলটা। হ্যাঁ, আমি নার্স। রোগীর সেবাই আমার কাজ। এছাড়াও রয়েছে আমার ক্লায়েন্ট। আমার এই দামি শরীরটাকে ভোগ করে। জান কুন্তল আমার রেট বিশ হাজার! ঘণ্টায় বিশ হাজার টাকা! কী? খুব ঘেন্না হচ্ছে? ভাবছ তো গতরাতটাও ছিল এমনই একটা চুক্তিহীন কেচ্ছা। নাহ্! কুন্তল না! আমার ভালবাসাটাকে এত নিষ্ঠুর ভেবে নিও না। যে সুখের জন্য, ভালবাসার জন্য জীবনের ত্রিশ–বত্রিশ বসন্ত ( না কি শীত!) পেরিয়ে এসেছি, সেটুকু তাড়িয়ে তাড়িয়ে চেটেপুটে নিয়েছি কাল রাত্রিতে। ওতে কোনও অভিনয় ছিল না। তোমার ভালবাসার পেলব স্পর্শে আমার গুটিয়ে থাকা পাপড়িগুলো উন্মুক্ত হয়েছিল। পরিপূর্ণ প্রষ্ফুটিত হয়েছিলাম আমি। ভাললাগার যে অনুভূতি চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়েছে আমার শরীরে, সেই রেশটুকু নিয়ে চলে যাচ্ছি আমি। আবার যে গুটিয়ে সঙ্কুচিত হবে এই শরীরটা অনাহূত স্পর্শে। তাই আমার ভিতরের মুগ্ধতার পরাগরেণু খুঁজে পাবে না কেউ।
তোমার পবিত্র জীবনে আমার এই নোংরা শরীরটা নিয়ে জড়াতে চাই না। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে পারলাম না। ক্ষমা কোরো আমাকে। রাত জেগে চিঠি লিখছি। আর নয়। ভোরের আলো ফুটেছে। তোমার ঘুম ভাঙার আগেই বিদায় নিতে হবে যে। শেষে আর একটা কথা, দেবদাস হওয়া তোমাকে মানায় না। যদি এখনও আমার প্রতি এক বিন্দুও ভালবাসা অটুট থাকে, তবে আমার দিব্যি— মদটা ছেড়ে দাও। পার তো ক্ষমা কোরো।— ইতি তোমার শ্বেতপদ্ম (শ্বেতা)’
চিঠিটা শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ বিছানায় থম মেরে বসে রইল কুন্তল। গতকালের সকালের স্বপ্নটা আবার মনে এল। স্বপ্নটা দেখার আগে শ্বেতার না–বলা কাহিনি তখনও শোনেনি। তাহলে কি দুঃস্বপ্নটাই সত্যি হল? ওর পবিত্র নিষ্পাপ শরীরটা রঙিন অথচ কুৎসিত শকুনের দল ঠুকরে চলেছে। সুন্দর পদ্ম–পাপড়ির মতো শরীরটাকে দংশনে ক্ষত–বিক্ষত করে দিচ্ছে ওরা।
একটা অলীক সুখ আর ভালোবাসার মরিচীকার পিছনে ছুটছিল শ্বেতা। আর কুন্তল নিজেও তো রুক্ষ মরুভূমির বুকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল একটুকরো মরুদ্যানের। পিপাসার্ত মন আর ক্ষুধিত দেহ নিয়ে মরীচিকার পিছনে ছুটেছে সেও। বালুকাময় মরুপ্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে তার নয়ন ক্লান্ত আর তৃষিত। অবশেষে খুঁজে পেয়েছিল সেই ইপ্সিত মরুদ্যান। দীঘার এই বালুকাময় সৈকতভূমির বুকেই। সেখানে ফুটেছিল একটা শ্বেতপদ্ম। আবার ক্লান্তহীন পথচলা মরিচীকার পিছনে।--------
--------------
এক দিকে দায়িত্ব বা কর্তব্য আর এক দিকে অদম্য প্রেমের হাতছানি। মনের মধ্যে চলে ভীষণ ঝড়। প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে যেতেও তাই প্রতিশ্রুতি রক্ষার কর্তব্যের কাছে মাথা ঝোঁকাতে হয়। সেই প্রতিশ্রুতির টানে অজান্তেই ডুবে যেতে হয় পঙ্কিল ঘূর্ণিতে। চলে অবিরাম মন্থন সেই পাঁকের ভিতর। মন্থন শেষে উঠে আসবে কি শুধুই হলাহল না পারিজাত? নাকি ফুটে উঠবে শ্বেত পদ্ম?
উত্তর রয়েছে এ উপন্যাসের পাতায় পাতায় – পবিত্র প্রেম, বিচ্ছেদ, অবৈধ প্রেম, গভীর ষরযন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গতা এবং রোমহর্ষক ঘটনার ঘনঘটায়।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি