পড়শিনগরের রূপকথা (ছোটোগল্প সংকলন)
সুব্রতকুমার রায়
এর পরে দুটি তারিখ আর দুটো দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো রক্তিম পালের ভূতই আমাকে বলেছিল। সেটা ছিল চব্বিশে সেপ্টেম্বর দু-হাজার দশ। শীতের মিহি কুয়াশায় ঢেকে ছিল ভোরের রোদ আর আমি রক্তিম পালের কাহিনিকার, আমাদের সরকারি আবাসনে বের হয়েছি প্রাতভ্রমণে। আমাদের আবাসনে কয়েক পাক খেলেই কয়েক কিলোমিটার হেঁটে ঘাম ঝরানো যায়। সঙ্গে কেউ ছিল না সেদিন, তাই একাই হাঁটছিলাম আমি। রোজ কিছুটা অন্ধকার থাকতেই বের হতাম। আলো না ফুটলেও এক লালচে আভায় কুয়াশাঢাকা আলো-আঁধারে আমি যখন আবাসনের মেনগেটের কাছে এসেছি তখন দেখি, গায়ে একটা ক্রুকাট গেঞ্জি আর পাজামা পরে রক্তিম পাল আবাসনে ঢুকছে, যদিও মেনগেটটায় তালা লাগানো ছিল। কয়েক মুহূর্তেই আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায় সে। আঁধারের আলোতে তার মুখটা স্পষ্ট না দেখতে পেলেও তার জ্বলজ্বলে চোখের চাউনি আমাকে কেমন যেন নিঃসাড় করে দিয়েছিল সেদিন।
অনেক দূর থেকে আসা রক্তিম পালের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম - জানেন গত শনিবার মানে উনিশে সেপ্টেম্বর বাবার হার্ট অ্যাটাক হল। যমের সঙ্গে লড়াই করে ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু সেই লড়াইটার শেষে যমের সঙ্গে একটা ট্রেড-অফ করতে হয়েছে। ভাবলাম মরবই যখন, তখন মালানি প্রোজেক্টের সর্বনাশ করে যাই, মৈনাকের আত্মা শান্তি পাবে।
আমি তখনও কিছু বুঝতে পারছিলাম না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছিলাম রক্তিম পালের গলায় দড়ির দাগ বসে গিয়ে রক্ত ফেটে বের হচ্ছে, আর তারপরই আমার আর্ত চিৎকারে হরিশগার্ডের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ঘরের বিছানায় কখন, কীভাবে আমাকে এনে শোয়ানো হয়েছিল, আমি জানি না। ততক্ষণে পুরো আবাসনেই খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল। ভোররাতের দিকে রক্তিম পাল মালানি কমপ্লেক্সে ঢুকে তাদের জানালায় হাত মেলে দেওয়া ঠাকুর-দেবতার বটগাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে (যদিও এটা হত্যা না আত্মহত্যা এই নিয়ে গবেষণাপত্র লিখব এমন পরিকল্পনা আছে আমার)।
তারপর থেকে ওই পোড়ো মালানি কমপ্লেক্স রক্তিম পালের হানাবাড়ি হয়েই আছে। রক্তিম পাল ওই বাড়িতেই এখন থাকে, আমার মতো অনেকেরই সেরকম বিশ্বাস।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.