PRITHIBIR BUKE DINGULI

(0 পর্যালোচনা)

প্রকাশক:
লালমাটি

দাম:
₹250.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

আমাদের বাড়ির খুব কাছে একটা 'ইংলিশ' মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল। এতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে ছয় বছর পড়াশোনা করা যেত। কিন্তু আমাদের পরিবারে বরাবরই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার চল ছিল, অন্তত শুরুর দিকটায় । আমাদের একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন, যিনি সকালে বিকেলে আমাদের পড়াতে আসতেন। আমার নির্দিষ্টভাবে মনে পড়ে না ঠিক কখন আমি লিখতে পড়তে শিখলাম। আমি নিশ্চিত আমার যখন চার বছর বয়স, তখন আমি আমার থেকে বড় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা শুরু করি। সকালে পড়তে বসতে আমার ভালই লাগত, কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় পড়তে হলে আমি ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যেতাম। ভাইবোনেদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে বসে প্রায় সবসময়ই আমার চোখে ঘুম চলে আসত। শিক্ষক মহাশয় খুব দয়ালু ছিলেন এবং তিনি প্রায়ই আমাকে উঠে শুতে যাবার অনুমতি দিতেন। কিন্তু তারপর কী হত? যে মুহূর্তে আমি পড়ার ঘর ছেড়ে বের হতাম আমার চোখ থেকে সব ঘুম উধাও হয়ে যেত। এমন কখনও হয়নি যে, আমি আবার তাঁর কাছে পড়তে ফেরত গিয়েছি।

প্রত্যেক দিন সন্ধ্যাবেলায় দাদু তার ঘরে বসে থাকতেন এবং জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়তেন দুটি মহাকাব্য, কাশীরাম দাসের মহাভারত আর কৃত্তিবাসী রামায়ণ। এই দুজনই বাংলার সুবিখ্যাত কবি ছিলেন, তাঁরা মহাকাব্যগুলিকে সরল কাব্যিক ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন। দাদুর প্রাত্যহিক মহাকাব্য পাঠের ধরনটি ছিল তখনকার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী। তিনি যে ঠিক আবৃত্তি করতেন তা নয়, তিনি মন্ত্রোচারণের ঢঙে গাইতেন, বিভিন্ন রকমের সুর খেলে যেত তাতে। ঠাকুমা নিয়মিত কাছে বসে শুনতে থাকতেন, মাঝেমাঝে আমিও যোগ দিতাম।

মহাকাব্যদুটির গল্পগুলি আমার ভারি পছন্দ ছিল। মহাভারতের প্রত্যেকটি গল্প এই ধুয়োর সঙ্গে শেষ হত—

মহাভারতের কথা অমৃতসমান।

কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।

পড়তে পড়তে মাঝেমাঝে দাদু একটু থামতেন। সে সময়ে ভৃত্য এসে তাঁকে ধূমপান দিয়ে যেত। দাদু সুগন্ধি তামাক খেতে পছন্দ করতেন। যখন তিনি তামাক খেতেন, তখন গোটা ঘরে সুগন্ধি তামাকের সুবাস ছড়িয়ে যেত। আমরা শিশুরা অবশ্যই তামাক খাবার অধিকারী ছিলাম না, কিন্তু ওই সুগন্ধ আমার খুব ভালো লাগত। আমি সেই বয়সেই ঠিক করলাম, বড় হয়ে আমি ধূমপান শুরু করব। যথাসময়ে, ইউরোপ থেকে ফিরে আসার পরে আমি ধূমপায়ী হয়ে গিয়েছিলাম।

এই রকম ধূমপানের বিরতির সময় আমি প্রায়ই দাদুকে প্রশ্ন করতাম এবং যেখান থেকে তিনি পড়লেন, সেই জায়গার কোনও বিশেষ বিষয় ব্যাখ্যা করে দিতে বলতাম। দাদু খুশি হয়েই আমার সব জিজ্ঞাসার উত্তর দিতেন। তাঁর এই সান্ধ্য পঠন মাসের পর মাস চলতে থাকত, যতদিন না তিনি একটি মহাকাব্য শেষ করে ফেলতেন। মহাভারতের মূল চরিত্রগুলিকে কেন্দ্র করে শয়ে শয়ে উপাখ্যান ছিল। আমার সমস্ত ছেলেবেলা জুড়ে আমি রামায়ণ ও মহাভারতের পাঠ শুনেছি এবং যতখানি সম্ভব তার থেকে শিখেছি। এখন আমার বয়স পঞ্চাশের ওপরে, আমি এখন একথা বলতে পারি যে মহাভারতের চরিত্রগুলি পৃথিবীর সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। শুভ এবং অশুভের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছেই। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না, আর কতদিন মানুষের এই সংঘর্ষ চলতে থাকবে, কিন্তু নিশ্চয়ই চিরকাল চলবে না। আমি কল্পনা করি, মানুষের বিবর্তন একদিন সেই মহারহস্য উদ্ঘাটন করবে এবং দেখাবে যে মানুষ চিরকালের মতো ভালোবাসা ও স্নেহ নিয়ে বেঁচে থাকার পাঠ শিখে নিতে পারে।

আন্তর্জাতিক মানুষ ছিলেন লক্ষ্মীশ্বর সিংহ। বিশ শতকের প্রথম দিকে জন্মে তিনি সাতটি দশক পৃথিবীর বুকে কাটিয়েছেন, তাঁর সময়কালে দুনিয়া তোলপাড় করা একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সে-সবের ঘাতপ্রতিঘাত অন্য অনেকের মতো তাঁর গায়েও এসে লেগেছে। দেশের মধ্যেও সে-সময়টা জাগরণের, সামাজিক আন্দোলনের, স্বদেশমুক্তির ও নতুন সৃষ্টির সময়। একজন ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে লক্ষ্মীশ্বর তাতেও উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ করেছেন। দুর্ভিক্ষ দেখেছেন, দেশভাগ দেখেছেন, ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় সর্বস্ব খুইয়েছেন। তার পরেও শান্তিনিকেতনে এসে নতুন করে সত্যিকারের মানুষ তৈরির প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন। এ-সমস্তই বিস্তারে বা ইশারায় লিপিবদ্ধ রয়েছে ওঁর আত্মজীবনী পৃথিবীর বুকে দিন গুলি-তে।

বই :– পৃথিবীর বুকে দিনগুলি

লেখকের নাম:– লখীশ্বর সিংহ

অনুবাদ:– সজল দে

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat™   |   © All rights reserved 2024.