‘প্রাণের অব্যক্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে উঠলো একটি পত্রিকায়’। বুদ্ধদেব বসু যে পত্রিকাটির সম্বন্ধে এই মন্তব্যটি করেছিলেন তার নাম সন্দেশ, বিগত একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালী শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে প্রিয় পত্রিকা। আরেক সাহিত্যিক সুনির্মল বসুর স্মৃতিকথায় তাঁর কৈশোরের অনুভূতিতে প্রকাশ পেয়েছে ওদের সবার প্রাণের কথা।, ‘…কি সুন্দর ছবি, গল্প, কবিতা, ধাঁধা। আমায় যেন এক নতুন রাজ্যে নিয়ে গেল।‘
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাতে জন্ম হয়েছিলো সন্দেশের-এর। ১৩২০-এর বৈশাখ (মে ১৯১৩) মাসে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল সন্দেশে-এর প্রথম সংখ্যা। প্রথম পর্যায় চলেছিল প্রায় চোদ্দ বছর, কার্তিক ১৩৩৩ (১৯২৭) পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ের আয়ু ছিল একমাস কম চার বছর, আশ্বিন ১৩৩৮(১৯৩১) থেকে শ্রাবণ ১৩৮২ (১৯৩৫) পর্যন্ত। তৃতীয় পর্যায়ের সন্দেশ যাত্রা শুরু করেছিল বৈশাখ ১৩৬৮ তে (১৯৬১)। বহু বাধা বিপত্তি পার করে , সন্দেশ আজও মনোরঞ্জন করে চলেছে বাংলার কিশোর-কিশোরীদের।
উপেন্দ্রকিশোরের সন্দেশ ২০১৩ তে অতিক্রম করেছে শতবর্ষের সীমারেখা। তার দু-বছর আগে তৃতীয় পর্যায়ের সন্দেশেরো হয়েছে সুবর্ণজয়ন্তী।
গত একশো বছরে সন্দেশের সম্পাদনার দায়িত্বে প্রায় সবসময়ই ছিলেন মসূয়ার রায় পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য। রায় পরিবারের বাইরেও একাধিক ব্যক্তি হয়েছিলেন সম্পাদক। আর সহ- সম্পাদক বা সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন অনেক শিশু সাহিত্যিক। একশো বছরের সন্দেশ সম্পাদক একাদশের সদস্যরা হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, সুবিনয় রায়, সুধাবিন্দু বিশ্বাস, সত্যজিৎ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, লীলা মজুমদার, নলিনী দাশ, বিজয়া রায়, সন্দীপ রায় ও সুজয় সোম।
সন্দেশ প্রথম সংখ্যাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বাংলার সব শিশু কিশোর-কিশোরীকে মুগ্ধ করেছিল। কারণ সন্দেশের অভিনবত্ব। প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, আর্টপ্লেটে ছাপা রঙিন ও সাদাকালো ছবি, ফিচার,প্রবন্ধ,গল্প, কবিতা, বিভাগীয় রচনা… সন্দেশের সব কিছুই ছোটোদের মনের মতন। বাংলা সাহিত্যের সব নামজাদা লেখকই কলম ধরেছেন সন্দেশের জন্য। ছোটোদের অতিপ্রিয় চরিত্র গুপী-বাঘা, পাগলা দাশু, ফেলুদা, প্রোফেসর শঙ্কু, গোয়েন্দা গণ্ডালুদের সঙ্গে বহু ছোটো বড়ো কমিকস কার্টুনও জন্ম নিয়ে চলেছে সন্দেশের পাতায়।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি