সৌভাগ্যশলাকা
অলোক সান্যাল
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী। এক রোমান সেনাপতির হাতের বর্শা ফলক বেয়ে নেমেছিল পবিত্র রক্ত। ঈশ্বরের সন্তানের। জন্ম নিয়েছিল রহস্যে মোড়া এক অলৌকিক-সম্ভব শ্রুতিকথা। সৌভাগ্যশলাকা।
এই উপন্যাসে প্রথম শতাব্দীর এই শ্রুতিকথার সূত্র এসে মিশে গিয়েছে বর্তমান শতাব্দীতে। মিথ নাকি ইতিহাস? সৌভাগ্যশলাকার অস্তিত্বের খোঁজে প্রাচীন ইতিহাস-গবেষকদের সঙ্গে সমুদ্রপ্রত্নতত্ত্ববিদ এমা মিলারের দুঃসাহসিক অভিযান এই উপন্যাস।
------------------------------------
বইয়ের কিছু অংশ :
পালাতে চাইছে গায়াস। প্রাণপণে ছুটে চলেছে। পিছনে, খুব কাছে চলে এসেছে ভয়ংকর প্রাণীটা! অতিকায় চেহারা। হাওয়ায় উড়ছে সোনালি কেশর। বিরাট মুখগহ্বর থেকে মুহুর্মুহু হুংকার বেরিয়ে আসছে। প্রতিবার সেই গর্জনে কেঁপে উঠছে গায়াসের পায়ের নীচের মাটি। তার উত্তপ্ত নিশ্বাস নিজের শরীরে অনুভব করতে পারছে গায়াস। আর সামান্য পথ। ওই তো, সামনেই বয়ে চলেছে টাইবার নদী। একবার, কোনোক্রমে একবার যদি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, তাহলেই বেঁচে যাবে সে।
'দ্রুত... আরও দ্রুত!'
গায়াস নিজেকে চিৎকার করে বলল। ক্লান্ত পা দুটো তার কথা শুনতে আপত্তি জানাচ্ছে। মনের শাসন মানছে না। কামড়ে ধরছে পায়ের পেশি। পাঁজর ভেঙে ফুসফুস বুঝি বেরিয়ে আসতে চাইছে।
'আর মাত্র একশো পা।'
কথাটা বললেও প্রতিরাতের মতো আজও এই একশো পা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারল না গায়াস। প্রবল জিঘাংসায় উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল পশুরাজ। তার শরীরের ভার নিয়ে ঘাসে লুটিয়ে পড়ল রোমান সেঞ্চুরিয়ান গায়াস কাসিয়াস। হাতের খাটো বর্শা দূরে ছিটকে পড়ল। সুতীক্ষ্ণ বঁড়শি যেভাবে লোভী মাছকে গেঁথে ফেলে, হিংস্র পশুটির নখপ্রান্ত ঠিক সেভাবে রোমান সেঞ্চুরিয়ানের ধাতব বর্ম ভেদ করে শরীরে চেপে বসল। তীব্র যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠল সে। শক্তিশালী চোয়াল একটানে ছিঁড়ে ফেলল গায়াসের ডান হাত। তারপর বাঁ-হাতও। ছিন্ন শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত। সেই রঙে ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে টাইবার নদী। আর্তনাদের শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে গায়াস। ছিটেফোঁটা যেটুকু আতঙ্ক তার মনে অবশিষ্ট ছিল, ধড় থেকে মা থা আলাদা হতে, সেটুকুও মিলিয়ে গেল।
বীভৎস দুঃস্বপ্ন থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল গায়াস। বিস্ফারিত চোখ দিয়ে নিজের অস্তিত্ব যাচাই করে নিল একবার। সুতির পোশাক ভিজে এমন অবস্থা, দেখে মনে হবে সে বুঝি এইমাত্র স্নান সেরে থার্মি (thermae) থেকে বেরিয়ে এসেছে। একটু আগে পাওয়া যন্ত্রণার প্রতিটি মুহূর্তের রেশ শরীরে এখনো রয়ে গেছে। দু-হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখা বিছানার চাদর, কাঁপতে থাকা পা বলে দিচ্ছে স্বপ্নের আতঙ্ক মুছে গেলেও, দিনের শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত তা গায়াসকে তাড়া করে ফিরবে।
'ওহ্ ঈশ্বর, এ তুমি আমাকে কেমন শাস্তি দিচ্ছ? প্রতিনিয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা! আর কত সহস্র মৃত্যুর পর আমি পাপমুক্ত হব?'
শূন্য ঘরের চার দেওয়ালে গায়াসের কাতরতা মাথা কুটতে কুটতে এক সময় নিঃশেষিত হলো। ধীরে, রণক্লান্ত যোদ্ধার মতো বিছানা থেকে নেমে এল গায়াস কাসিয়াস। না, সে এখন আর রোমান সেঞ্চুরিয়ান নয়। সাধারণ রোমান নাগরিক।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি