টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি

(0 পর্যালোচনা)

প্রকাশক:
সুপ্রকাশ

দাম:
₹250.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি

মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদ : শুভশ্রী দাস

অলংকরণ : পার্থপ্রতিম সরকার, আত্রেয়ী সাহা

টাঁড় সেই স্থান, যেখানে শুধু ঝাঁটি, ঝাড়, জঙ্গল, খাঁ খাঁ ভূমি, পাথর এবং অসম্ভব গরিব কেলেকুষ্টি ডিংলাপারা মানুষজন। তারা ওই মালভূমির খাঁজে-খাঁজে টিলার গোড়ালিতে কিছু চাষ-আবাদ করে, অথবা আশপাশ অঞ্চলের খনিতে কয়লা, অভ্র, ম্যাঙ্গানিজ এইসব আকর তোলে। যারা এসব কাজে দড় নয়, অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এবং গভীর অরণ্যবাসী গোষ্ঠী, তারা জংলি লতা, গাছের আঁশ-- এইসব দিয়ে দড়ি বোনে, বনের কাঠ চুরি করে হাইরোডের ধারে সাজিয়ে বসে বিক্রি করার জন্য। এইসব রকমারি কাজ করে তারা।

সাতঘাটের জল খেয়ে, সাতসতেরো হ্যাপা সেরে এরকম এক স্থানে আমার স্থিতি। এখানে ভূমির চরিত্র বড়ো বিশৃঙ্খলার। এ-ভূমি টাঁড়, তো ও-ভূমি বহিয়ার। টাঁড়ে ভূমি বড়ো রুক্ষ, তথাপি বৃক্ষ সব বনস্পতি। নাবালের ভূমিতে জন্মকর্ম, ডাঙর হওয়া। সেখানে শস্য-শাববক, গাছপালা, বৃক্ষ লক্-লহমায় বাড়ে। তারা শ্যামলিমায় শ্যামল, কান্তিতে কান্ত। টাঁড়ে তা নয়। এখানে বৃক্ষ -বনস্পতির চরিত্র ভিন্ন। তাদের শরীরে কান্তভাব কম। কিন্তু তারাও কি ছায়া দেয় না? দেয়, তবে তফাত আছে। এই তফাতটি প্রকৃতি এবং মানুষের এক নতুন অধ্যায় খুলে দেয় চোখের সামনে। রুক্ষ কঠোর আদিম এই সৌন্দর্য।

বিশাল বিস্তার এই ভূখণ্ডের বেশিটাই টাঁড়। কোথাও নাবাল, বহিয়ার আছে বটে, কিন্তু ওই কেলেকুষ্টি ডিংলাপারারা সেখানে থাকতে পারে না। সে-সব ভূমি রইসদের দখলে। সে-সব স্থান বড়ো চমৎকার শোভন। মানুষ নাবাল থেকে টাঁড়ে যায় তখনই, যখন অহেতুক উৎপাতে কোনো না কোনো বিপর্যয় ঘটে। এখানে যারা টাঁড়ের বাসিন্দা, তারা সেই উৎপাতের কারণেই নাবাল, বহিয়ার ভূমি ছেড়ে এসে নিজ-নিজ ডেরাডাণ্ডা ফেলেছে। নাবাল, বহিয়ারে রইসরা তাদের থাকতে দিতে নারাজ। যেমন করে হোক, সে-স্থান থেকে তাদের উৎখাত করে ছাড়বে তারা। জাতপাত নিয়ে হাজার হাঙ্গামা, হাজার ফ্যাসাদ। 

এই ঝাঁটি জঙ্গল, খাঁ খাঁ ভূমি আর আধমরা মানুষগুলোর মধ্যে এসে পড়ে পালিশ-করা নাগরিক মনমগজে আর গতরে বড়ো 'ঘিনিঘিনি ঝিনিঝিনি' ভাব হয়েছিল। নাগাড়ে তেরাত্তির গুম মেরে বসে শুধু পালিশ-করা জীবনযাপনের জন্য হা-পিত্যেশ। স্থানের নাম তোপচাঁচি। সামনে শাহিসড়ক, পিছনে বেলমা পাহাড়। তার পাশে গাঁটির নাম বেলামু।

---------

সবাই বলে বেলমি পাহাড়ির ঝোরা। তিরতির করে জল বইছে। পাথরের এ খাঁজে ঢুকে ও-খাঁজ থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে সে এক দৃশ্য বটে। আশপাশের জমিন ঢেউ খেলানো টাঁড়। সেই ঢেউ-এর শেষ সীমানা ঝাঁটি জঙ্গল নিয়ে পরেশনাথ পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছোয় ধাপে ধাপে— সে এক অসামান্য ভূচিত্র, যেন গাঢ় সবুজের ঢেউ। ঐ জমিগুলি চেঁছে ছুলে শত্রুঘনেরা বা অনুরূপ মানুষেরা আবাদ করেছে। সেখানে পাহাড়ের গা বেয়ে বৃষ্টির যে ধারা নামে, তাকে আল বন্দি করে ধানের চাষ হয়। 

এই বেলামু টাঁড় গাঁওটি একটি 'ফরেস গাঁও' বটে। এখানে চারদিকেই জঙ্গল আর পাথর। পাথর, পাহাড়, টিলা আর মালভূমির কাঁকড়ওলা উঁচু জমি। এর আশেপাশের ব্যাপ্তিতে আছে 'ফরেস'। শাল শার্জম। শত্রুঘন এবং তাঁর গোষ্ঠীর মানুষদের বড়ো প্রিয় এই মহীরুহ। আকাশছোঁয়া মাথা নিয়ে ছিল তাদের ঘন বসতি। কোম্পানির আমল থেকেই এই মহীরুহদের প্রতি দৃষ্টি পড়ে সাগরপাড়ের কুৎসিত লোভীদের। ফলত শাল, পিয়াল, শিমুল, কেঁদ-এর একদা গহন অরণ্য আজ আর নেই। পাহাড়-টিলার অন্দর-কন্দরের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে স্বাধীন জীবন পাওয়ার জন্য হাহাকার। 

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.