বাঙালির পথ-ঘাটের খাওয়া-দাওয়া

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
সম্পাদিত
প্রকাশক সুপ্রকাশ

মূল্য
₹560.00 ₹590.00 -5%
ক্লাব পয়েন্ট: 50
সংস্করণ
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া

সম্পাদনা : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

প্রচ্ছদ : শোভন সরকার 

অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত, শোভন সরকার, মেখলা ভট্টাচার্য

"...সামনে তাকিয়ে দেখি আমরা একটা খালের ধারে উপস্থিত হয়েছি। সাধারণ সেচ খাল, কিন্তু এখানে বেশ চওড়া। এই ধরনের সেচ খাল বেশি বৃষ্টির দিনে নিকাশি খালেরও কাজ করে—জমির বাড়তি জল টেনে নেয়। এটা বোধহয় খালের ঘাট। খালের ওপারেও ফসলের ক্ষেত, যতদূর চোখ যায় বসতি চোখে পড়ে না। একটা মাঝারি নৌকা ঘাটে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা।

ঘাটের ধারে জনমনিষ্যি নেই। শুধু একটা বেড়ার চিরাচরিত দোকান। সামনে বাঁশের মাচা। কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা! আমরা দোকানটার দিকে এগোলাম । কাছে যেতে দোকানির দেখা পাওয়া গেল। সব শুনে দোকানি বললেন— 'আপনারা বৈকুণ্ঠপুর থেকে যে রাস্তা সোজা ধরেছিলেন সেই রাস্তায় মিনিট পাটেক আগুলেই বাঁয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে ঐ রাস্তা ধরতে হতো। আপনারা সোজা আসে পড়েছেন।'

আমাদের শরীরে শক্তি ছিল না। বসে পড়লাম বাঁশের মাচায়।

—'কিছু খাবার মতো পাওয়া যাবে?'

—'চা আর লেড়ো বিস্কুট।'

—‘শুধু এই ?’ হতাশা ফুটে উঠল বিনোদের গলায়। 

—'এখেনে আর কী পাওয়া যাবে বলেন? বিক্কিরি করি তো পান-বিড়ি, কেউ এক-আধ কাপ চা খায় বলে ব্যবস্থা রাখা।'

—'কোনো খাবার রাখেন না?'

—'এই ঘাটে আসে কে? এই যে এতটা পথ আলেন, একডাও লোক চক্ষে দেখছেন?' সত্যিই তো, প্রায় চল্লিশ মিনিট হেঁটেছি আমরা রাস্তায় একটি লোক, একজন সাইকেল-আরোহীও নজরে আসেনি!

—'আজ আবার রোববার, ইসকুলের ছেলেমেয়েগুলাও নেই।'

—'কিন্তু আমাদের ভীষণ খিদে পেয়েছে।' বিনোদ মরিয়া হয়ে বলল। 

—তাই তো, কী খেতে দেই আপনাদেরকে?' দোকানি ভ্রু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড ভাবল। তারপর বলল—'দোকানে তো কিছু নাই, তবে বাড়ির ঘরে থাকতে পারে। আইচ্ছা জলপান বানায়ে নিতি পারি, খাবেন নাকিন।'

—'সেটা আবার কী?'

—'খেয়েই দেখেন।' 

বিনোদ তাড়াতাড়ি বলল—'দেন দেন, তাই-ই দেন, কেরোসিন বা আলকাতরা বাদে যা আছে তাই দেন।’

লোকটি হাসল—'বসেন, দেখি বউ কী দিতি পারে।'

দোকানি দোকানের পেছনে দরমায় তৈরি ঘরের দিকে চলে গেল। লোকটি তাহলে পরিবার নিয়ে এখানেই বাস করে।

বিনোদ দম বন্ধ করে গুম হয়ে বসে রইল।

এই 'জলপান'টা কী জিনিস কে জানে! বিভূতিভূষণের অপরাজিত উপন্যাসে অপুর ছেলে কাজল ‘অবাক জলপান' নামক খাবারটি খেয়ে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিল। ‘জলপান' খাওয়ার আগেই আমাদের তো প্রায় কাজলের দশা। অপুর সঙ্গে কলকাতায় এসে কাজলের মনে হয়েছিল— 'অবাক জলপান জিনিসটা কী? বাবার দেওয়া দুটো পয়সা কাছে ছিল, এক পয়সার অবাক জলপান কিনিয়া খাইয়া সে সত্যিই অবাক হইয়া গেল। মনে হইল, অমন অপূর্ব জিনিস সে আগে কখনও খায় নাই। চাল-ছোলা ভাজা সে অনেক খাইয়াছে। কিন্তু কি মশলা দিয়া ইহারা তৈরী করে এই অবাক জলপান?'

পেটে অগ্নিকুণ্ড নিয়ে আমরা দুজন বসেই আছি। দোকানি এলেন দুহাতে দুটো পানের মোড়কের মতো করে পাকানো খবরের কাগজের ঠোঙা নিয়ে। ঠোঙার ভেতরে উঁকি দেওয়ার দরকার হলো না, কেননা ভিতরের খাদ্যবস্তুটি স্তূপের মতো উঁকি দিচ্ছিল। খাবারটি কী দিয়ে তৈরি দেখার মতো ধৈর্য ছিল না, মুড়ি মাখার মতো দেখতে খাবারটি একমুঠ নিয়ে মুখে দিতেই কাজলের মতো আমরাই অবাক হয়ে গেলাম। প্রথমে মিষ্টি, তার পরে টোকলো স্বাদের নোনতা, তারপর আবার মিষ্টি, গন্ধটা আমের আচারের মতো। তারপর পর্যায়ক্রমে বাদাম, ফুসফুসে ছোলাভাজা, মুগের পাঁপড় দাঁতের সংঘর্ষে বিচূর্ণিত হওয়ার অনুভব—সবকিছু ছাপিয়ে একটা অদ্ভুত মিষ্টির অনুভূতি। খাবারটার চেহারা দেখব কি, স্বাদের আরামে আমাদের চোখ বুজে এল। কয়েক থাবা খেয়ে ঘটি থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে আমাদের সম্বিৎ ফিরল। বিনোদ সেই জলপান চিবোতে চিবোতে বলল – 'এর মধ্যে মুড়ি, মুড়কি, বাদাম, ছোলা আছে তো বুঝতে পারছি, কিন্তু তাছাড়া আর কী আছে।'

দোকানি আমাদের জন্য চা বানানোর আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন, মুখ তুলে হেসে বললেন— ‘মুড়ি ছাড়া ঘরের চালভাজা, চিড়েভাজা আছে, আমতেল দিয়ে সবটা মাখা হয়েছে, মিষ্টির স্বাদটা শুধু মুড়কির নয়, ঘরে তৈরি মোয়া ভেঙে দেয়া হইছে। একটা মুগের পাঁপড় সেঁকে ভেঙে গুঁড়ো করে দেওয়া হয়েছে। টক স্বাদটা আমচুরের। সঙ্গে ঘরে তৈরি ভাজা-মশলা দেয়া হইছে একখাবল, ভাজা মুগের ডাল একখাবল। আর কী কী যে আছে তা আমি তো বলতে পারবোনি, আমার বউ জানে।'

পথ ভুলে যাওয়ার দুঃখ ভোলানো এমন জলপান আর কখনও খাইনি আমরা।..."

সেরিবানিজ জাতক অথবা ফেরিওয়ালার পথঘাট : ফেরিওয়ালার খাওয়া-দাওয়া

............................

দুর্লভ সূত্রধর

পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি