সেকালের চিত্র চরিত্র

(0 পর্যালোচনা)


দাম:
₹490.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

সেকালের চিত্র চরিত্র

দীনেন্দ্রকুমার রায় 

সংকলন, সম্পাদনা, টীকা ও ভূমিকা : শতঞ্জীব রাহা

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সৌজন্য চক্রবর্তী

দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীকেন্দ্রিক রচনা ও স্মৃতিচর্চায় দেশ-কাল-সময়ের, স্বকাল- স্বজনের অদ্ব্যর্থ পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে। যে-গুণে কোনো রচনা শুধু চলমানতার সঙ্গবৈভবে নিজেই সময়ের সাক্ষী থেকে সারথি হয়ে ওঠে— দীনেন্দ্রকুমারের রচনাও বহুলাংশে এই গুণে গুণান্বিত। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে থাকা এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আপাত স্থির, অথচ সদা পরিবর্তনমান জীবন—সেই জীবনের সুখ-দুঃখ, মহত্ত্ব-সংকীর্ণতা, আনন্দ-বেদনা, বিধি-বিধান, আচার-বিচার-প্রথা-প্রকরণ, সম্পন্নতা-অপ্রতুলতা— এই সবকিছুর নিখুঁত ও বিশদ অনুপুঙ্খের সযত্ন উপস্থাপনার মাঝে কখন যেন অনুভূত হতে থাকে প্রতিষ্ঠানিক সমাজের ভরকেন্দ্রটির স্থিতি-অস্থিতির দোলাচল, তার সবেদন চাপ। আবার কখন যেন স্তরে-স্তরান্তরে বিন্যস্ত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র নামক মাথা-পচা মাছটির ল্যাজার দিকটিও পরিচিত দুর্গন্ধ ছড়ায়— গ্রামে-গঞ্জে-অখ্যাত জনপদে আড়কাঠিরা দেখা দেয়, স্বমহিমায় জাঁকিয়ে ওঠে ক্ষমতাবান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেবতার দল। একটি পদানত দেশের প্রাদেশিক ভাষার লেখক, যাঁর জাতি ও ভূমি-পরিচয়ে অনার্জিত আভিজাত্য বা বনেদীআনার দাক্ষিণ্য নেই, তাঁর পক্ষে একটি সমগ্র ব্যবস্থা বা তন্ত্রকে যতটা খুলে দেখানো সম্ভব, দীনেন্দ্রকুমার ততটাই সবিক্রম বিস্তারে সেসব উপস্থাপিত করেন। এজন্য একজন পেশাদার লেখক হিসেবে যতটা দায় নেওয়া সম্ভব তার থেকে অনেক বেশি দায় গ্রহণ করেন তিনি। এবং দীনেন্দ্রকুমারের প্রণোদনাময় ডিটেলিংয়ে সেগুলি নিজেই ইতিহাসের সঙ্গী তো বটেই, বহু ক্ষেত্রে ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠে।

----------

বড়োদিনের ছুটিতে লেখক ফিরছেন নিজের গ্রামে। সেই শীতের রাতে সমস্ত চরাচরে ছেয়ে থাকা স্তম্ভিত অন্ধকার, রাস্তার দু-পাশে ঝোপঝাড়ে পুঞ্জীভূত জোনাকির আলো, প্যাঁচাসহ রাতচরা পাখিদের ডাক, গাড়োয়ানের কণ্ঠে দু-কলি মেঠোসুরের গান সমারোহে এই নিশিযাত্রাও তো এক উদযাপনের মতো। সমতলের শীত-সকালের গ্রামীণ-রম্যতা, ধূসর কুয়াশার অবগুণ্ঠনে ঢাকা দিগন্তের আহ্বান, শীতকালীন ফসলের ক্ষেতে ঊষালোকে শিশিরবিন্দুতে রূপালি আলোর ছটা, বাচষ্পতিদাদার সযতন পুষ্পচয়ন কিংবা দারুণ শীতের সকালে গ্রাম-বালিকাদের শেফালিকা-সংগ্রহের আবহ, শিউলির মৃদু গন্ধ, আম-কাঁঠালের বাগান, ঘন বন-হলুদের জঙ্গল—সবই তো সেই স্ববিশ্বের সুরভিত জীবনের উৎসবে নিমন্ত্রণ। তারই মাঝে গাছিদের খেজুর রস সংগ্রহ, ক্ষুদ্রকায়া নদীটিকে ঘিরে জীবনের চাঞ্চল্য বা খেজুর রস-প্রস্তুতির মাঝেই বাইনের পাশে জড়ো হয়ে সদ্য-প্রস্তুত খেজুর গুড়ে বালকভোজন, নষ্টচন্দ্রের মিথিক্যাল অনুষঙ্গ, বাজারের বিচিত্র পণ্য ছাপিয়ে বিচিত্রতর মানুষের কলকাকলি — সবই যেন সেই প্রাণপণে বেঁচে থাকার অভীপ্সাসমূহের উল্লসিত, বেদনার্ত, চমকিত এক-একটি উৎসবের দিন আর রাত। রাতগড়িয়ে দুপুর হওয়া মনসার ভাসানের গান শুনে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছিন্ন, গ্রামত্যাগে উদ্যত—সর্বার্থে ব্যর্থ, বিপন্ন, সবহারা মহেশ দাসের থমকে যাওয়া পা-দুটি সেই রবাহূত-মহোৎসবে পাত পেড়ে বসে পড়তে চায়।

সেই আশ্চর্য ভূবিশ্বে, অন্যতর সেই উৎসবের জীবনে দীনেন্দ্রকুমারের পাঠকদের নিত্য নিমন্ত্রণ।

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.