সপ্তগ্রামের সন্ধানে

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
দিলীপ সাহা
প্রকাশক:
শালিধান

দাম:
₹399.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

সপ্তগ্রামের সন্ধানে

দিলীপ সাহা

কবি বিপ্রদাস ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে, চাঁদ সওদাগরের সপ্তগ্রাম শহর দর্শন বর্ণনায় বলেছেন—-

‘বুহিত্র চাপায়্যা কুলে চাদ অধিকারি বলে

দেখিব কেমন সপ্তগ্রাম।

তথা সপ্ত রিসিস্থান সর্ব্বদেব অধিষ্ঠান

সোক দুখ সর্ব্বগুণধাম।।’

সপ্তগ্রাম প্রসঙ্গ এলেই প্রিয়ব্রতের সাত-পুত্রের প্রসঙ্গ এবং সেই সূত্রে সাতটি গ্রামনাম শিবপুর, খামারপাড়া, বাঁশবেড়িয়া, ত্রিশ বিঘা, বাসুদেবপুর, কৃষ্ণপুর, দেবানন্দপুর উচ্চারিত হয়, যেগুলি নিয়ে গড়ে ওঠে সপ্তগ্রাম। এ সবের বুক চিরেই বয়ে গেছে গঙ্গা-সরস্বতী। স্থানীয় ভাষায় নদীর নাম যাই হোক না কেন, আর্য-দর্শনের বিচারে বৃহত্তম জলপ্রবাহকে আবার ‘সরস্বতী’ নামে অভিহিত করা হত।

ওই কাব্যেই বিপ্রদাস বলেছেন—

‘অভিনব সুর পুরী দেখি ঘর সারি সারি

প্রতি ঘর কনকের ঝারা।’

এই বর্ণনা থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই সপ্তগ্রাম ছিল এক অত্যন্ত সমৃদ্ধ বন্দর-নগর। নদীমাতৃক ভূমি হওয়ায় দু’ পাশে ক্রমশ উর্বর হয়েছে শস্যভূমি, হয়েছে নানাবিধ শিল্পের পত্তন—- তার ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে জনবসতি। এভাবেই ধীরে ধীরে সপ্তগ্রাম হয়ে উঠেছে এক বর্ধিষ্ণু নগর।

বাঙালি জীবনে শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ, সাহিত্যে বণিক ও বাণিজ্য বিষয়ে যে রূপকথা সৃষ্টি হয়েছে, তা কি শুধু রূপকথা, নাকি এর কোনো বাস্তবতা আছে—- তার অনুসন্ধান চলেছে অনেক কাল ধরে; বাঙালি জীবনের ভিত্তিমূল কোন গভীরে প্রোথিত তারও অনুসন্ধান চলেছে।

তবে শুধুমাত্র সাহিত্যে নয়, ইতিহাসও এই বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়৷ ফরাসি, পর্তুগিজ, ডাচ, ইংরেজ ইত্যাদি বহু জনজাতি পদার্পণ করে এই নগরে৷ তাই সাহিত্য এবং ইতিহাস এই দুই ক্ষেত্রেই ‘সপ্তগ্রাম’ বারবার উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে৷ পৌরাণিক কাঠামো থেকে ইতিহাস ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে৷

প্রায় ১৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সপ্তগ্রাম বিষয়ে চর্চা চলছে। ব্রিটিশ রেভারেন্ড জেমস লঙ, অধ্যাপক এইচ ব্লকম্যান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডি. জি. ক্র্যাফোর্ড প্রমুখ ব্রিটিশ গুণীজন সপ্তগ্রামে ক্ষেত্রসমীক্ষার কাজে এসেছিলেন। ১৩০৫ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সরস্বতী নদীর পূর্বতীর বরাবর হেঁটে কৃষ্ণপুর থেকে শিবপুর-ত্রিবেণী পর্যন্ত ক্ষেত্রসমীক্ষার কাজ করেছিলেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি লেখেন, ‘‘ত্রিশবিঘা হইতে পূর্বে বাঁশবেড়িয়া ও উত্তরে মগরাগঞ্জ ও ত্রিবেণী হইতে পশ্চিমে মগরা ও দক্ষিণে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত যদি একটি চতুরস্ত্র ক্ষেত্র কল্পনা করা যায়, তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রটিই প্রাচীন সপ্তগ্রামের ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ…’’

বলাই বাহুল্য, বাংলার ইতিহাসের আলো-আঁধারি পথের মধ্যেই ‘সপ্তগ্রাম’ বিরাজমান। দীর্ঘকাল ধরে সপ্তগ্রাম চর্চার সঙ্গে যুক্ত, প্রয়াত লেখক দিলীপ সাহার অনুসন্ধানী মন ও নিরলস প্রচেষ্টার একটাই লক্ষ্য ছিল—- সপ্তগ্রাম নিয়ে রূপকথা ও বাস্তবতার যে আলো-আঁধারী; তার মধ্য থেকে সপ্তগ্রামের বাস্তবতাকে তুলে আনা। এই গ্রন্থে সপ্তগ্রামের ইতিহাস, ভূগোল, ধর্মাচার ও লোকসংস্কৃতির সামগ্রিক ইতিহাস উঠে এসেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পুরাণ ও ইতিহাসপ্রেমী পাঠকের কাছে পুনর্মুদ্রিত এই গ্রন্থ এক নতুন দিক উন্মোচন করবে।

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.