ঠাকুরবাড়ির ভাষাচর্চা
দেবাশিস ভৌমিক
উত্তর কলকাতার ৬/৪ দ্বারকানাথ টেগোর লেনের লালবাড়িটি নিয়ে মানুষের কৌতূহল অন্তহীন। সেটি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। সুবিশাল এই হর্ম্যরাজি বঙ্গসংস্কৃতির চলমানতায় একাধিক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির ভাষা ও ভাষাচর্চা নিয়ে সেভাবে কোন আলোকিত ইতিহাস ছিল না। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ভাষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট শীল ও শীলনের ঐতিহ্য প্রথম তৈরি করেছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। অতঃপর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃভাষাপ্রীতি ও সাহিত্যচর্চা উত্তরকালের কাছে পাথেয় হয়ে উঠল। মহর্ষির সন্তানেরা সরাসরি বাংলা ব্যাকরণ চর্চায় বৃত হয়েছেন। প্রাদেশিক কিংবা বিদেশি ভাষা থেকে বাংলা অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেছেন। বাংলা গদ্যশৈলীকে নিয়ে মেতে উঠেছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাচর্চার এই প্রবাহকে শিল্পিত মননের অভিজ্ঞান করে তুলেছেন তাঁদের লেখায়। অনালোকিত সেই ভাষাচর্চার আলোকময় রূপালেখ্য ‘ঠাকুরবাড়ির ভাষাচর্চা’।
ঠাকুরবাড়িতে বসে ভাষাচর্চা করেছেন হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিন পুত্র— হিতেন্দ্রনাথ, ক্ষিতীন্দ্রনাথ ও ঋতেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এঁদের মূল উৎসাহ ছিল ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বে। বলিয়ে ভাষা, লিখিয়ে ভাষা আর রূপকথার ভাষা নির্মাণ করছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা গদ্যশৈলীকে অপরূপ রাজপ্রাসাদ বানিয়ে তুলছেন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলায় কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো লিখছেন সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা বর্ণমালার সংস্কারে এগিয়ে আসছেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বঙ্গদেশের ভাষাচর্চায় এঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতির উপর আলো ছড়িয়ে দিয়েছে ‘ঠাকুরবাড়ির ভাষাচর্চা’।
ঠাকুরবাড়ির মহিলারা কীভাবে বাংলা ভাষা নিয়ে চর্চা করছেন, বিশেষ করে স্বর্ণকুমারী দেবী ও শোভনাসুন্দরী দেবী, সেসব নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে এ গ্রন্থে। ঠাকুরবাড়ির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জন ছিলেন প্রমথ চৌধুরী, লক্ষ্মীনাথ বেজ়বরুয়া এবং হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষাচর্চার মূলস্রোতকে বেগবতী ও বহুমুখী করে তোলায় এঁদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্মরণ এবং চর্চার মধ্যে এসেছেন তাঁরাও। ১৮০০ থেকে ১৯৫০, এই দেড়শো বছরে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি বাংলা ভাষাচর্চায় যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল, তাকেই দু’মলাটে ধরার প্রচেষ্টা ‘ঠাকুরবাড়ির ভাষাচর্চা’। এ গ্রন্থের শেষে উল্লেখিত হয়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ‘ভারতী’, ‘সাধনা’, ‘পুণ্য’ ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত ভাষাচর্চাবিষয়ক সমস্ত নিবন্ধ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের ভাষাচর্চাবিষয়ক নানা অনালোকিত অনুশীলনকে ভাস্বর করে তোলা হয়েছে ‘ঠাকুরবাড়ির ভাষাচর্চা’-য়।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.